রিফাত ও বিউটির হত্যাকাণ্ড

খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় দেশবাসী

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০১৯, ০৮:১১ পিএম

ঢাকা : বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে স্ত্রীর সামনে রিফাত নামে এক যুবককে হত্যা করেছে স্থানীয় বখাটেরা। অন্যদিকে একই দিনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিউটি আক্তার কুট্টি নামে এক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। গত পরশু ঘটে যাওয়া পৃথক দুটো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গতকাল ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে ফুটপাতে চায়ের টেবিলে আলোচনা ছিল এ দুটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আলোচনার সারসংক্ষেপ ছিল দুটো হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

অনেকে এও বলছেন, খুলনার রাকিব, সিলেটের খাদিজা ও শিশু রাজন হত্যার আসামিদের যেভাবে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে— এ দুটো ক্ষেত্রেও যেন সেরকমই হয়। এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলে অন্য অপরাধীরা সতর্ক হবে এবং নিহতের পরিবারের সদস্যরা কিছুটা হলেও স্বস্তিবোধ করবে।

এদিকে গত পরশু ঘটে যাওয়া দুটো মর্মান্তিক হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। তারা হত্যাকারীচক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের মিশন নিয়ে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। এরই মধ্যে অবশ্য গতকাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের যে কোনো মূল্যে গ্রেপ্তারের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।

এদিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামিরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্টও। এই বার্তা পুলিশ প্রধানকে (আইজিপি) জানিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষকে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদালতকে বলেন, আদালতের মৌখিক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা হয়েছে। সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। চন্দন নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় আদালত মূল আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না প্রশ্ন তোলেন। আদালত এ ব্যাপারে স্বপ্রণোদিতভাবেই বিষয়টি নজরে রাখবেন বলেন জানান। একই সঙ্গে পুলিশ প্রধানকেও এ বিষয়ে অবহিত করে তৎপর হওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেন আদালত।

অন্যদিকে বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী-পশ্চিমপাড়া সড়কে বিউটি আক্তার কুট্টি নামে এক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকালে খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিউটি হত্যার সুবিচার হবে তার পরিবারকে আশ্বাস দেন তিনি। নিহত বিউটি আক্তার কুট্টি স্থানীয় চনপাড়া পুনর্বাসন শাখা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, বিউটি ছিলেন মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তার স্বামী ছিলেন আদালতের মুহুরী। বিউটি তার স্বামীকে দিয়ে মাদক ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করাতেন। এর জেরে মাদক ব্যবসায়ীরা তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয় এবং গত বছরের ২৯ অক্টোবর তাকে হত্যা করে। এরপর থেকে বিউটিকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা। প্রতিদিন বিউটি প্রাতঃভ্রমণে যেতেন। এটা মাদক ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই জানত। ঘটনার দিন ওত পেতে থেকে তার ওপর হামলা চালায়।

বরগুনার রিফাত শরীফ ও নারায়ণগঞ্জে বিউটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মইনুর রহমান বলেন, দুটো ঘটনাই বর্বরোচিত। যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে। এছাড়াও আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা এ ব্যাপারে বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা এগুলো। কারা এসব সন্ত্রাসী যারা প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করে। দিনে দুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এ অবস্থা চলছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই