কেন্দ্রের আগেই তৃণমূলে সম্মেলনের প্রস্তুতি আ.লীগের

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০১৯, ১০:৩৪ পিএম

ঢাকা : দলের আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশের তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরনোদের নবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং দলের নিজস্ব কার্যালয়ের ঠিকানা স্থায়ী কি না- এসব তথ্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাতে বলা হয়েছে।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা, এর আগের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও তৃণমূলের নতুন কমিটি নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সব কমিটির নির্বাচন বা দেশের সব এলাকায় সম্মেলন করা নানা কারণে সম্ভব নয় বলে মনে করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে দলের তৃণমূলকে যতটুকু সম্ভব গোছানোর জোরালো চেষ্টা চলছে। সময় কম হওয়ায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন জেলার মেয়াদ পার করা ও দীর্ঘদিন সম্মলেন না হওয়া কমিটিগুলোর দিকে। সেসব জেলায় জরুরি বার্তায় তাগিদ দেওয়া হয়েছে দ্রুত সম্মেলন করার। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

দলীয় সূত্রমতে, মেয়াদ পার হওয়া কমিটি দিয়ে চলছে টানা দশ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ তৃণমূল। অনেক জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন হচ্ছে না নিয়মিত। অনেক জেলার কমিটির নির্ধারিত সময় পার তো হয়েছেই, সঙ্গে এক যুগেরও বেশি কেটে গেছে। ফলে এসব এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যাশিত গতি নেই। কোথাও কোথাও সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়েও পড়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আশ্বাস পেলেও এলাকাগুলোর নেতাকর্মীরা নির্ধারিত সময়ে নতুন কমিটি পাননি। এবার তৃণমূলের সম্মেলন করতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন কয়েকটি এলাকার তৃণমূলের নেতা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, এবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ সংকটাপন্ন জেলা ও উপজেলাগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেওয়ায় তৃণমূলে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কারণ, এর মধ্যে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেন। তৃণমূল কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনেক জেলায় বর্ধিত সভাও শেষ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রবীণদের যথাযথ মর্যাদা ঠিক রেখে আর নতুন ও ত্যাগী তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে তৃণমূল কমিটি গঠন করা হবে বলে আশাবাদী তৃণমূল।

নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল ও সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনে বিভিন্ন নির্দেশের পাশাপাশি দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর বিষয়েও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এবার সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি বাড়াতে শুরু থেকেই সচেষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। গত দুবারের মতো যেন হঠাৎ করে অভিযান গতিহীন হয়ে না পড়ে, এ বিষয়েও সতর্ক দল।

সবশেষ ২০১৭ সালে সাড়ম্বরে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও পরের বছর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের জোয়ারে তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। ওই অভিযানের মধ্য দিয়ে নতুন ভোটারসহ দুই কোটি নতুন সদস্য করার টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগের। এর আগে ২০১০ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ওই বছরও তা বেশিদিন চলেনি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে প্রতি তিন বছর অন্তর দলের সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। আর নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানও সময় সময় করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্কাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সারা দেশের সব জেলা ও উপজেলায় আগামী ১ জুলাই থেকে দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবার পারিবারিক পরিচয়কে বড় করে না দেখে নতুন সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন শেষ করার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্মেলন না করার কোনো বিকল্প নেই। তাই সম্মেলন পেছানোরও কোনো সুযোগ নেই।’

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্কাদক আবদুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, ‘আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ইউনিটগুলোর সম্মেলন হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্কর্ক নেই। জাতীয় সম্মেলন অক্টোবর মাসে হবে, এ সময়টাকে টার্গেট ধরে যদি করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, কোন কোন এলাকায় সম্মেলন করা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই লক্ষ্য নির্ধারণের জন্যই আমরা চিঠি পাঠিয়েছি।’

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্কাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি ইতোমধ্যে পেয়েছি। সেই চিঠির মর্ম উপলব্ধি করে প্রতিটি সংগঠনকে সেভাবেই মৌখিকভাবে বলেছি। আমরা লিখিতভাবেও জানাব।’

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক জাতীয় সম্মেলনের আগে দলকে আরো সুসংগঠিত করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটিগুলো যথাযথ বিধি অনুযায়ী আমরা সংগঠিত করেছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই