দুই সিটি করপোরেশনের মিনি ডাস্টবিন প্রকল্প

আট কোটি টাকা জলে

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ০২:২২ পিএম

ঢাকা : ঢাকার রাস্তা থেকে উধাও ‘মিনি ডাস্টবিন’ আপাতত ফিরবে না। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে রাজধানীর সড়কগুলোতে প্রায় ১১ হাজার মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করে দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এসব ডাস্টবিনের সিংহভাগই উধাও হয়েছে। রাস্তায় এসব বিনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ফলে প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। দুই সিটি করপোরেশন আপাতত নতুন করে কোনো বিন স্থাপন করতে চায় না।  

সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের সচেতনতার ঘাটতি আর টোকাই-চোরের কারণে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর এতে দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় আট কোটি টাকা জলে গেছে।  

সরেজিমনে রাজধানীর বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হঠাৎ দু-একটি বিন থাকলেও তার ব্যবহার নেই। ব্যবস্থাপনার অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। বিনগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। মেরামত বা পুনঃস্থাপন করলে কয়েকদিন পরই আবার ভেঙে যায় বা চুরি হয়ে যায় এসব মিনি ডাস্টবিন। এগুলোতে ফেলা ময়লা পরিষ্কারও করা হয় না। মেরামত আর পুনঃস্থাপনে খরচ বেড়েই চলেছে এসব বিনের পেছনে।  

রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই বেশ ঘটা করে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নানারকম প্রচার অভিযান চালায় বিভিন্ন সংস্থা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সম্প্রতি এক প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশ নেন ১৫ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী। যদিও সবমিলিয়ে এই কর্মসূচিতে আসা মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায় এবং রেকর্ড করে আয়োজনটি। কিন্তু বাস্তবে এসব কর্মসূচি কতটা পরিচ্ছন্ন করছে নগরবাসীকে আর নগরবাসীই বা কতটা সচেতন হচ্ছেন?

গত দু-তিন দিন রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মনিপুরীপাড়া, তেজকুনিপাড়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে মিনি ডাস্টবিন খুবই কম চোখে পড়েছে এই প্রতিবেদকের।  

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হেলেনা বেগম নামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, নগর পরিচ্ছন্ন করতে শুধু সিটি করপোরেশনকে দুষলে হবে না। মানুষের সচেতনতাও জরুরি। দেখা গেল এখানে ঘুরতে আসা মানুষজন বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে খাবার কিংবা সঙ্গে থাকা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার শেষে রাস্তাতেই ফেলছেন।

একজন নারী দর্শনার্থী বলছিলেন, এখানে তো ময়লা ফেলার আলাদা কোনো জায়গা নেই। সবাই ফুটপাতে ফেলছে, তাই আমিও রুটির প্যাকেটটা ফুটপাতেই ফেললাম। সিটি করপোরেশনের বিনগুলো গেল কোথায়?  

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এত বড় শহরে প্রত্যেকটি ওয়েস্ট বিন পাহারা দেওয়ার মতো লোকবল আমার নেই। বিশ্বের কোথাও ওয়েস্ট বিন পাহারা দেওয়া হয় না। এখানে নাগরিকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। চুরি যাওয়া বিনগুলো প্রতিস্থাপনও করা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু থাকছে না। এটি খুবই দুঃখজনক।  

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, নগরীর অপরিচ্ছন্নতার দায় সবার। কেবল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে এটি সম্ভব নয়। মানুষ শহরকে ভালোবাসতে ভুলে গেছে। স্বার্থপর মানসিকতাও এর জন্য দায়ী। আমরা এখনো মনে করি ঘরের দরজা বন্ধ করলে ভেতরের যে আঙিনা সেটাই বোধ হয় আমার জীবন, সেটিই আমার সংসার।  

জানা গেছে, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ২০১৬ সালে রাজধানীর সড়কগুলোতে বসানো হয় প্রায় ১১ হাজার মিনি ডাস্টবিন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০টি করে মোট পাঁচ হাজার ৭০০ মিনি বিন বসানো হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনেও বসানো হয় পাঁচ হাজারের বেশি মিনি ডাস্টবিন।

দুই সিটি করপোরেশনে বিনগুলো বসানোর কিছুদিন পরই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, বিনগুলো পরিষ্কার করা হয় না বলেই তারা সেগুলোতে খুব একটা ময়লা ফেলেন না। ফলে অধিকাংশ ওয়েস্ট বিনই খালি পড়ে থাকে। কয়েকবার সংস্কার ও চুরি হওয়ার পর দুই সিটি করপোরেশনে বসানো অনেক ডাস্টবিন পুনঃস্থাপন করতে হয়েছে। এসব বিনের একেকটির দাম ছয় হাজার টাকারও বেশি। বিনগুলো মেরামত করতেও একেকটির পেছনে গড়ে খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকার বেশি।  

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, মিনি বিনের প্রকল্প ভেস্তে দিতে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও কাজ করেছে। ফুটপাতে দোকান বসানোর জন্য অনেক বিন ভেঙে ফেলেছেন এসব ব্যবসায়ী।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই