নির্বাচন ও ভোটমুখী ঢাকা

তফসিল ঘোষণা চলতি মাসেই

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০২:৫২ পিএম

ঢাকা : চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই ভোটমুখী হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। আসছে জানুয়ারিতে একই দিনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধেই ঘোষণা করা হতে পারে তফসিল।

সরকারের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে দুর্নীতিগ্রস্ত অনেকেই প্রার্থী হবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিতর্কিত কাউন্সিলররা নতুন করে হয়তো আর মনোনয়ন পাবেন না।  

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে একসঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার মাধ্যমে ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত আনিসুল হক। আর দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক মারা যান। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হন আতিকুল ইসলাম।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আশা করব, নির্বাচনে সৎ ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হবে।

যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের যাতে মনোনয়ন দেওয়া না হয়। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা উচিত কি-না প্রশ্নে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নিলে গণতন্ত্র চর্চা থাকবে না।  

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি গত এক বছর চেষ্টা করেছি। আমার জ্ঞান কম থাকতে পারে, অভিজ্ঞতা নেই। তবে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে আমি আবারো সাধারণ মানুষের কাছে যেতে চাই, ঢাকা নগরীর জন্য কাজ করতে চাই। অপরদিকে, সাঈদ খোকনকে টেলিফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে জানুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষের দিকে ভোট হতে পারে। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের সভা হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শুরু হয়েছিল। ওইদিনের মুলতবি সভা রোববার সকালে অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে সচিব আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নভেম্বরের ১৮ তারিখের পর যেকোনো দিন এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

চলতি ভোটার তালিকা দিয়ে ইভিএমের মাধ্যমে এই দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। যেহেতু এখনো সময় হয়নি তাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মার্চের শেষ বা তার পরে নতুন ভোটার নিয়ে হালনাগাদ তালিকার মাধ্যমে এ সিটিতে ভোট হবে।

এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে, এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে কমিশন।

সিটি নির্বাচনে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি-না এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, কোনো আইনি জটিলতা আমরা এখনো দেখছি না।
ইভিএমের মাধ্যমে দুই সিটি ভোট চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ তো বটেই। তবে আমরা এ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম। এ নির্বাচন আয়োজনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছেন বলেও জানান সচিব।

সূত্রগুলো বলছে, গত পাঁচ বছর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চালাতে গিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন সাঈদ খোকন।

তাছাড়া নির্বাচনের আগে তিনি বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও তার অনেকগুলো এখনো স্বপ্ন রয়ে গেছে। তবে দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি হয়েছে তা সবাই মানছেন।

কিন্তু সফলতার থেকে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী ফোরামে তথ্য রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে বাদ পড়তে পারেন সাঈদ খোকন।

অন্যদিকে, দক্ষিণের মেয়র হিসেবে কয়েক মাস পার করেছেন আতিকুল ইসলাম। তিনিও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছেন। তবে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য এসেছেন আতিকুল ইসলাম। কিন্তু নগরের সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে জবাবদিহিতার মুখোমুখি তিনিও।

২০১৫ সালের নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে প্রার্থী দেওয়া হয় দুই সিটির মেয়র নির্বাচনে। তবে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়াল শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান নির্বাচন থেকে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম বৈঠক হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৪ মে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বৈঠক ১৭ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই হিসেবে এ বছর ১৭ নভেম্বর ঢাকা উত্তর ও ২০ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিনগণনা শুরু হবে।

জানা গেছে, সরকারের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এরই মধ্যে পাকড়াও হয়েছেন বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর এখন কারাগারে। অনেকেই আছেন আত্মগোপনে। দক্ষিণের একজন কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সিল সভায় যোগ না দেওয়ায় ২১ জন কাউন্সিলরকে শোকজ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিরা মনোনয়ন পেলে সেটি নগরবাসীর জন্য ভালো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই