কারা পাচ্ছেন উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৫:৪৭ পিএম

ঢাকা : চলমান শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কার মধ্যেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও দলের যে কোনো পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ ও অভিযুক্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযানের কারণে এবার সম্মেলনের আগে ভিন্ন পরিবেশের মুখোমুখি হয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণের পদপ্রত্যাশী নেতারা। অনেক নেতার জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঢাকা মহানগরের দুই অংশের অভিযুক্ত কেউ কেউ পদ তো হারাচ্ছেনই, দল ও সংগঠন থেকেও বহিষ্কারের আতঙ্কে আছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মূল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা ও যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের একশ্রেণির নেতাকর্মীর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এবার বিতর্কিত পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে।

মূলত দলের সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দুর্নীতি ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে নতুন পরিবেশের মুখোমুখি করে সরকারি দলের কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

যে কারো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান ‘শূন্য সহনশীল’ (জিরো টলারেন্স) হওয়ায় এবারের সম্মেলন অন্য চেহারা পেয়েছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।

চলমান অভিযানের মধ্যে ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনগুলোতে নতুন ও তুলনামূলক বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব দায়িত্ব পেয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রকৃত আদর্শিক ও ত্যাগী নেতারা আসবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

শুদ্ধি অভিযান চলাকালীন কেমন হতে পারে দুই অংশের নতুন কমিটি, কারা আসছেন নেতৃত্বে, বিতর্কিত নেতৃত্বের গন্তব্য কোথায়-আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের কাছেও একই প্রশ্ন ও নানা কৌতূহল। নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতার অন্যবারের মতো এবার স্পষ্ট কিছু জানা নেই।

সম্মেলনের বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা দেখভাল করছেন।

ইতোমধ্যে তিনি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মহানগরের দুই অংশের শীর্ষ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকেই নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে দুই অংশের নেতৃত্বে আসছে নতুন মুখ-এমন আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। উত্তরের সভাপতি এবং দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এমনকি দুই অংশের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ চারটি পদে (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক) পরিবর্তন আসতে পারে বলেও সূত্র উল্লেখ করে। জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতা বয়সের ভারে ক্লান্ত হওয়ায় নতুন করে দায়িত্ব না-ও পেতে পারেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে সব সময় নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। তরুণ ও প্রবীণদের সমন্বয়ে শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য কমিটি নির্বাচিত হয়।

এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চমকপ্রদ কমিটি দেবেন।

তবে নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা একান্ত দলীয় প্রধানের এখতিয়ার। তিনি যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই দায়িত্ব দেবেন।

সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এবার পরিবর্তনের গুঞ্জন আছে। বর্তমান এ কে এম রহমত উল্লাহ সভাপতি হলেও এ পদে অভিন্ন মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নাম আলোচনায় আছে। মায়াকে এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে না-এমন আলোচনাও অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে চলছে।

আবার সাবেক মন্ত্রী মায়াকে মহানগর উত্তর বা দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের যেকোনো একটিতে সভাপতি পদে দেখা যেতে পারে-এমন কথাও বলাবলি হচ্ছে। এ কে এম রহমত উল্লাহ এবারো সভাপতি পদপ্রত্যাশী। একই পদে আলোচনায় আছেন শেখ বজলুর রহমান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসলামুল হক সভাপতি হতে পারেন বলেও আলোচনা চলছে।

মহানগর উত্তরের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সাদেক খান এবারো একই পদে প্রার্থী। দলীয় সভাপতির কাছে তার ভাবমূর্তি ইতিবাচক হওয়ায় স্বপদে বহাল থাকার সম্ভাবনা আছে।

বর্তমান কমিটির দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-কাদের খান ও এস এম মান্নান কচির নামও আলোচনায় আছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।

বর্তমান কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন এবার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা ওয়াকিল উদ্দিন গত সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। জনপ্রিয় হওয়ায় তাকেও দেওয়া হতে পারে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।

মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আবুল হাসনাত বয়সজনিত কারণে এবার বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে।

সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন অভিন্ন ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম।

এছাড়া একই পদে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন মহানগর বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ সহ-সভাপতি আওলাদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদ কামাল এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আখতার হোসেন।

তথ্যমতে, চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের।

মেয়াদোত্তীর্ণ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন আগামীকাল ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। ওই দিন  বেলা ১১টায় ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এর তিন বছর পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগ করা হয়।

২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ, ৪৫টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষিত হয়। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই