তৃতীয় মেয়াদে সরকারের ১ বছর পূর্তি, সবচেয়ে সফল ৪ মন্ত্রী

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২০, ০৯:৪৭ পিএম

ঢাকা: টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারে আছে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তিনবারের মতো সরকার গঠন করেন। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকেই নতুন। কিন্তু সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা নতুন নন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি চারবার সরকার গঠন করেছেন। 

জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর প্রায় ৪০ বছরের। শেখ হাসিনা বর্তমান সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের একজন। তাঁর মতো অভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার এক বছরের কর্মকাণ্ড মূল্যায়নের দাবি রাখে। নতুন মন্ত্রিসভার কেউ কেউ আন্তরিকতার সঙ্গে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করলেও অনেকেই অনুধাবন করতে পারেননি তাঁদের পদটির গুরুত্ব। যদিও কোনো ক্ষেত্রেই সবার যোগ্যতা সমান হবে না। 

সাম্প্রতিক নানা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, যোগ্যতা-দক্ষতার পাশাপাশি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা দিয়ে দেশের স্বার্থে ও জনগণের কল্যাণে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখছেন চারজন মন্ত্রী। সফল চার মন্ত্রীকে নিয়েই এবার আলোচনা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হলেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও চারবারের মতো মন্ত্রিসভায় নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন। 

আওয়ামী লীগের চারবারের মন্ত্রিসভায় চতুর্থবারের মতো মন্ত্রিত্ব ধরে রাখা ওবায়দুল কাদের কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সততার নজির রাখছেন। আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কোনো বিকল্প নেই। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ ওবায়দুল কাদেরের তদারকিতে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এসব কাজে দুর্নীতির কোন অভিযোগ আসেনি। সবকিছু বিবেচনায় বর্তমান সরকারের সেরা মন্ত্রীদের মধ্যে একজন ওবায়দুল কাদের।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদে তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান ড. হাছান মাহমুদ। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তথ্য মন্ত্রণালয়কে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছেন তিনি। দেশে যে অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলো আছে, সেগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে তৎপর হন হাছান মাহমুদ। তথ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় সম্প্রচারক্ষেত্রে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। আইন বহির্ভুতভাবে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার পুরোপুরি বন্ধ না হলেও অনেক কমে এসেছে। গুজব তৈরির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম জোরালো ভূমিকা রেখেছে। আগে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল করার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল। 

তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর সম্প্রচার তারিখকে প্রাধান্য দিয়ে চ্যানেলের সিরিয়াল করার নির্দেশ দেন ড. হাছান মাহমুদ। আগে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল মানা হত না। তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর সম্প্রচার তারিখকে প্রাধান্য দিয়ে চ্যানেলের সিরিয়াল করতে অপারেটরদের নির্দেশ দেন ড. হাছান মাহমুদ। এখন ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে সিরিয়াল মানা হচ্ছে। ছয় দশকে ভারতে কখনো বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) দেখা যেত না।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ভারতে বিটিভি দেখানোর কাজটি সম্পন্ন করেন ড. হাছান মাহমুদ। টিভি বাড়ায় বিজ্ঞাপন ভাগ হয়ে যাচ্ছিল। আগে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যেত। যা বন্ধ করা হয়েছে। সম্প্রচার মাধ্যম পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হলে বিদেশেও বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপনে কর আরোপের জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান নিমাণ করে বিটিভিকে গণমুখী করার জন্যে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে দায়িত্ব নিয়েই ৩ মাসের মাথায় ৯ ঘণ্টা, তারপর ১২ ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্যোগ নেন। আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে টেরিস্ট্ররিয়াল সম্প্রচারের ঘোষণা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।

স্কুলজীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়া তৃণমূলের এই নেতা সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তথা দেশ এবং বিদেশেও নানা কর্মকাণ্ডে প্রশংসিত হচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে জঙ্গিবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আন্তরিকতা ও গৃহীত পদক্ষেপের ফলে। জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। ক্যাসিনো-বাণিজ্য, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা প্রশংসনীয়।

এসব বিবেচনায় আসাদুজ্জামান খান কামাল সফল মন্ত্রীদের তালিকায় একজন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী কোন বিতর্কে না জড়িয়ে নৌপরিবহনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এসেছে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর হাত ধরে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নদী বন্দরের আওতাধীন নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১৫ হাজার ১৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৫৬৭ দশমিক ১২ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। 

উচ্ছেদের পর নদীর তীরভূমি পুনঃদখল রোধকল্পে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে নদীর উভয় তীরে ওয়াকওয়ে, আরসিসি স্টেপস, বসার বেঞ্চ, ইকোপার্ক নির্মাণ, নদীরপাড় বাঁধাই, গাইড ওয়াল নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। দেশের নৌ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারা দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনঃখনন শুরু হয়েছে। ১৭৮টি নদীর ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের পাশাপাশি নৌপথ রক্ষার্থে নদী কমিশন গঠনসহ নদী দখল, দূষণ রোধে উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বুড়িগঙ্গায় পানিতে নোংরা এবং কালচে ভাব অনেকটা কেটে গেছে। 

এ ছাড়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় নদীপাড়ের পরিবেশ আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। এজন্য সার্বিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের সেরা চার মন্ত্রীদের তালিকায় তিনিও রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ