খালেদা জিয়ার কারাবাসের ২ বছর পূর্তিতে সুখবর পেল বিএনপি

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০, ০৩:১২ পিএম

ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) কারাবাসের দুই বছর। গেল ২০১৮ সালের এই দিনে তিনি কারাগারে যান। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ( বিএসএমএমইউ ) হাসপাতালের ৬১২ কেবিনে চুপচাপই ছিলেন। কোন হাঁক-ডাক নেই তার। ঠান্ডা প্রকৃতির মেজাজে দুই বছর কাঠিয়ে দিলেন তিনি। তবে কারাগার ও হাসপাতালের কেবিনে দুই বছরের বেশির ভাগ সময় ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি বই ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটিয়েছে তিনি। 

এছাড়া গৃহকর্মী বা ফুটফরমায়েশকারী বিশ্বস্ত ফাতেমাসহ সেখানে দায়িত্বরত কারারক্ষী ও হাসপাতালের মহিলা স্টাফদের সাথেও আলাপচারিতায় সময় কাটিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল কেবিনে স্বজনদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে অনেকবার। সে সময় খাবার থেকে শুরু করে ব্যবহারিক সামগ্রী দিয়েছেন স্বজনরা। জন্মদিনে এবং ঈদ বিশেষ দিনগুলোতে স্বজনরা তাকে রান্না করা বিশেষ খাবার খাইয়েছেন। তাছাড়া হাসপাতাল কেবিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ভগ্নিপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, নাতনী জাহিয়া রহমান, সামিন ইসলাম, রাখিল ইসলাম, আরিবা ইসলাম। এ সময় নাতী ও নাতনীরা হাসপাতাল কেবিনে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা  জানিয়েছেন। দাদীর জন্য নাতনীরা কান্নাকাটিও করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে মা সিথির সঙ্গে পুনরায় লন্ডন চলে যান তারা।

এ বিষয়ে সেলিমা ইসলাম বলেন, কেবিনে খালেদা জিয়ার সুষ্ঠু ভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। তার এক হাতের আঙ্গুল মুষ্টি করতে পারছেন না। তাছাড়া পায়ের ব্যথায় হাঁটতে পারছেন না। রক্তচাপ ও ডায়বেটিস সব সময় বেশি থাকছে। নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পারিবারিক ভাবে তার বোন সেলিমা ইসলাম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি দাবি জানিয়ে আসছিলেন। প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রায় ১০ দফা সরকারের কাছে তার বোন খালেদার জামিনে মুক্তি চেয়েছিল। কিন্তু জামিন না হওয়ায় পারিবারিক ভাবে বিশেষ আবেদনের মাধ্যমে জামিনের জন্যও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান সেলিমা ইসলাম।

কারা সূত্র বলেছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে বেশি করে ফল খেতে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া চিকন আতপ চালের নরম ভাত ও পেপের জুস এবং দেশি মুরগির স্যুপ খাচ্ছেন তিনি। তাছাড়া সেন্ডুইচ, নুডুলস ও কফি খেতে পছন্দ করেন তিনি। তা খেতে দেয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। কারা কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসকের তথ্য মতে, বয়সের বার্ধক্যের কারণে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ মেয়াদী কয়েকটি অসুখ রয়েছে। নিয়মতি পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ওষুধের মাধ্যমে এ অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। তাছাড়া তার চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্য সহকারী ও ফিজিওথেরাপিষ্ট দ্বারা তাকে ফিজিও খেরাপী দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, পেছনের তথ্যানুযায়ী ৩৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার কারাবাস নতুন নয়। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়ে এক বছর সাত দিন বন্দি ছিলেন তিনি। তখন তাকে রাখা হয়েছিল সাবজেল ঘোষণা করে সংসদ ভবনে স্পিকারের বাড়িতে। এর আগে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ৮৪ সালের ৩ মে ও ৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিন দফায় বন্দি হন খালেদা জিয়া।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে গেলেও আপিলে তার মুক্তির আশায় ছিলেন বিএনপি নেতারা। দফায় দফায় তার জামিন আবেদন করলেও আদালত তা মঞ্জুর করেনি। উল্টো ৫ বছররের সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে গেলেও উচ্চ আদালত ওই মামলায় তার সাজা আরো ৫ বছর বাড়িয়ে দেন। এসময়ের মধ্যেই অন্য অরেকটি মামলায় আরো ৭ বছরের সাজা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের। ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল কারাবন্দি খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া। এরপর থেকে তিনি কেবিন ব্লকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে, কারাবন্দির দুই বছর উপলক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি (মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ) ঘোষণা করেছে বিএনপি। এছাড়া বেগম জিয়ার দ্বিতীয় কারা বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করেছে। গত দুই বছরে বেগম জিয়ার মুক্তির কর্মসূচির মধ্যে ছিল, বিভাগীয় সমাবেশ, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনা সভা এবং প্রতিবাদ মিছিলও করছে। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদেরকে ব্রিফও করেছে দলটি। এর মধ্যে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পুলিশ পন্ড করে দিয়েছিলো।

আর ঢাকায় একটি জনসভার জন্য চারবার অনুমতি চেয়েও পায়নি দলটি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলের এই কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্তি সম্ভব নয়। বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে রাজপথে নামতে হবে।

অবশেষে শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সমাবেশ করার মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। এরপর শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে সমাবেশ শুরু হয়।

বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা বিচারাধীন থাকলেও কারামুক্তিতে বাধা মাত্র দুটি মামলা। তার কারামুক্তিতে এখন অন্তত এই দুই মামলায় জামিন পেতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এতদিন কারাগারে থাকার কথা নয়। আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এটা হয়েছে। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় তাকে কারাবন্দি রাখা হয়েছে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনে যা আছে তা-ই হবে। খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী জীবন রক্ষার্থে দণ্ডাদেশ সাময়িক স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অনুমতি দেয়ার সুযোগ আছে।

সোনালীনিউজ/এমএএএই্চ