বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল, আগস্টে দ্বিতীয় ঢেউ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২০, ০৬:৩২ পিএম

ঢাকা: বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে- এমনটাই মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে ব্রিফিংগুলো দেওয়া হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে গত ১ মাসে পরিস্থিতি একই রকম। অর্থাৎ ২১ থেকে ২৩ শতাংশের ভেতরে সংক্রমণের হার ঘোরাফেরা করছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এটা ইতিবাচক, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং আস্তে আস্তে সংক্রমণের হার কমতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক ব্যক্তি যারা করোনা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এরকম বক্তব্যের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারছেন না। বরং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ঈদের পর বাংলাদেশে আবার সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে এবং আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউটি আসতে পারে। এইরকম ধারণার পেছনে তাঁরা কতগুলো সুনির্দিষ্ট কারণের কথা বলছেন। এর মধ্যে রয়েছে-

১. বিশ্ব অভিজ্ঞতা

বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে দেখা গেছে যে, করোনা মহামারির প্রকোপ একবারে শেষ হয়ে যায় না। একবার চলে যাওয়ার পরে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আসে। দ্বিতীয় ঢেউ কোন কোন দেশে ব্যাপক হয়, কোন কোন দেশে সীমিত হয়। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ হবে না সীমিত আকারে হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে বাংলাদেশে আগস্ট নাগাদ দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা।

২. সবকিছু খুলে দেওয়া

বাংলাদেশ গত জুন থেকেই সবকিছু খুলে দিয়েছে এবং করোনার থেকে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। একারণে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা থেকেও সরকার সরে এসেছে। ফলে অর্থনৈতিক কিছু গতি সঞ্চার হলেও করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘদিন যাবত
থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে মানুষের সামাজিক মেলামেশা বেড়েছে, গণপরিবহন ব্যবহার সহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করছে, বাজারহাটে যাচ্ছে এবং এই সমস্ত এলাকায় স্বাস্থ্যবিধির উপরে খুব একটা নজরদারি রাখা হচ্ছেনা। যার ফলে আমাদের করোনা সংক্রমণের যে গতি সেই গতি বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে কারণে নতুন করে সংক্রমণ তৈরি অব্যহত আছে এবং এই সংক্রমণের একটা পর্যায়ে দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কোন দেশের করোনা আপনাপনি চলে যায়না। একটা সুনির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করতে হয় এবং সেই পন্থাগুলো বাংলাদেশ অবলম্বণ করছে না। এখন পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক লকডাউন ছাড়া কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

৩. আবার নতুন করে বিদেশে যাওয়া- আসা শুরু

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউইয়ের একটি বড় কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে যে, মানুষ আবার বিদেশ থেকে দেশে আসছে এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর খুলে দেওয়ার কারণে লোকজনের যাওয়া-আসা বেড়েছে। একদিকে যেমন বিদেশ থেকে লোক আসছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণভাবে ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে কিংবা ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় আসা এই সমস্ত ঘটনাগুলো বাড়ছে। এর ফলে আমাদের নতুন করে আক্রান্ত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং নতুনভাবে আক্রান্ত শুরু হলে আমাদের দ্বিতীয় ঢেউ আসা অনিবার্য বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

৪. স্বাস্থ্য বিধির প্রতি অনীহা

বাংলাদেশের মানুষ করোনাকে এক প্রকার মেনেই নিয়েছে। প্রতিদিন যে পরীক্ষা হচ্ছে তাতে ২১ থেকে ২৩ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ৩ হাজারের আশেপাশে প্রতিদিন নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে। ৩৫ থেকে ৫০ এর ভেতরে মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে- এগুলো নিয়ে মানুষের আর মাথাব্যথা নেই। ফলে মানুষ এখন করোনাকে মোকাবেলায় যে স্বাস্থ্যবিধি মানা সেটাকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং আস্তে আস্তে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি শৈথিল্য আসছে। এর ফলে বাংলাদেশে দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

৫. পরীক্ষার বাইরে থাকা বহু মানুষ

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে তা খুবই নূন্যতম এবং বিপুল পরিমাণ মানুষ পরীক্ষার বাইরে রয়েছে। যারা মৃদু উপসর্গ নিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আর এর ফলে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ যেকোন সময় শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

সোনালীনিউজ/এইচএন