দেশজুড়ে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান

  • জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৮, ২০১৬, ১১:১৫ এএম

সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর সোমবার (৬ জুন) রাত থেকে এই অভিযান শুরু হয়।

এর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যদের ‘কঠোর বার্তা’ দিতে চায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উগ্রপন্থিদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ তারা। 

প্রথম রাতের (৬ জুন) অভিযানে ঢাকা ও রাজশাহীতে জেএমবির তিন জঙ্গি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো জঙ্গিকে গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া যায়নি। এর আগে ঢাকা ও গাজীপুরে পৃথক অভিযানে পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অন্তত পাঁচ সন্দেহভাজন উগ্রপন্থি নিহত হয়েছিলেন। এবারের অভিযানে উত্তরাঞ্চলসহ জঙ্গিপ্রবণ জেলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে পুলিশের অতীত অভিজ্ঞতা তেমন সুখকর নয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অধিকাংশ জঙ্গি হামলার রহস্যভেদ করতে পারেনি পুলিশ।

বর্তমানে দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছয়টি জঙ্গি সংগঠন থাকলেও এবিটি ও জেএমবি বেশি সক্রিয়। গত দেড় বছরে ৪৬টি জঙ্গি হামলার ২৫টির সঙ্গে জেএমবির সংশ্লিষ্টতার তথ্য রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ১০টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল এবিটি। বাকিগুলোর সঙ্গে অন্যান্য সংগঠন জড়িত। পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জেএমবির সদস্যরা জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

এদিকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ওসিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযানে ওসিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন না বলে অভিযোগ আছে। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব বিষয় এড়িয়ে চলেন। তাই এখন থেকে কোনো থানা এলাকায় উগ্রপন্থিরা অপতৎপরতা চালালে তার ‘দায়’ ওসিদের নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে ওসিদের নানা গাফিলতির বিষয় উঠে আসে। অধিকাংশ থানার ওসি নিজ নিজ এলাকার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ব্যাপারে পরিপূর্ণভাবে তথ্য রাখেন না। বর্তমান বাস্তবতায় জঙ্গি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা এরই মধ্যে সব এসপি ও পুলিশের অন্যান্য ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান শুরু হয়েছে। যে কোনো মূল্যে এসব অপশক্তি প্রতিহত করা হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ উগ্রপন্থিদের মোকাবেলা করবে।

গত দেড় বছরে দেশের ১৫টি জেলায় ৪৬টি জঙ্গি হামলায় ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে ঢাকা, দিনাজপুর, রাজশাহী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও রংপুরে। রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, গাইবান্ধাসহ আশপাশের জেলায় ঢাকা অঞ্চল থেকে জেএমবি অপারেশন পরিচালনা করে। এ ছাড়া চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে জেএমবির আরেকটি পৃথক অঞ্চল রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি