তৃণমূলের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের ধারাবাহিক বৈঠক

জোট ছাড়াই সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের পরামর্শ

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১, ০৯:৪৯ পিএম

ঢাকা : জোট কিংবা ফ্রন্ট নয়, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলনের আদলে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে হবে। আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করতে হবে।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতিদের নিয়ে দলের হাইকমান্ডের মতবিনিময় সভায় এই পরামর্শ দেন দলের নেতারা। বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সিরিজ বৈঠক চলছে। নেতারা আন্দোলন, দলের পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির করণীয় নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন। বৈঠক শেষে এসব মতামত পর্যালোচনা করে দলের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। দলের নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে এ বিষয়টিই আলোচনা হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। নতুন আইন করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। একটি অনির্বাচিত, দখলদার সরকার বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং মানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষা থাকে তা পুরোপুরিভাবে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। দেশে একটা ভয়াবহ ত্রাসের কর্র্তৃত্ববাদী সরকার চলছে।

এর হাত থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি, আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করছি, আমাদের নেতৃবৃন্দের মতামত নিচ্ছি। আমরা ভবিষ্যতে আমাদের দলের রাজনীতি এবং সামগ্রিক জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি।’

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি দেশের অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির দায়িত্ব বেশি। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে হলে বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে। অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে হবে।

সূত্র আরও জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার (১৯৯১-৯৬) ক্ষমতায় থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করেছিল। অনেকটা নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনের মতো।

সূত্র জানায়, নেতারা বলেছেন মনে রাখতে হবে ’৯০ আর ’২১ এক নয়। তখনকার পুলিশ প্রশাসনসহ অন্যান্য প্রশাসন আর বর্তমান প্রশাসন এক নয়। আন্দোলনে সফল হতে গেলে পরিকল্পনামাফিক রাজপথে কর্মসূচি দিতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। ঘরে বসে কমিটি করলে হবে না; নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি ইউনিট কমিটি করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে অংশ নেওয়া নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘অধিকাংশ নেতা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, বিগত এক যুগে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো সুষ্ঠু ভোট হয়নি।

এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্য আত্মহত্যার শামিল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যেতে হবে।

আন্দোলন ছাড়া সরকার আমাদের দাবি মানবে না। তাই একমাত্র পথ আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন। সে আন্দোলনে তৃণমূল নেতাদের সম্পৃক্ত করতে চাইলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের রাজপথে থাকতে হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এখনো সময় আছে। সংগঠন শক্তিশালী করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

যেসব নেতা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন ডা. আনোয়ার হোসেন, মোতাহার হোসেন, আরিফুল হক চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন আজাদ, ম্যামাচিং, মামুনুর রশীদ মামুন, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, আবু সুফিয়ানসহ মোট ৬৪ নেতা। পরে সমাপনী বক্তব্য দেন তারেক রহমান।   

এর আগে বিকেল ৪টায় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা বিভাগের বিএনপি নির্বাহী কমিটি সদস্য ও জেলা বিএনপি সভাপতি মিলিয়ে মোট ৮৫ নেতা অংশ নেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

নেতাদের মধ্যে অংশ নেন আবদুল খালেক, রফিক শিকদার, মঞ্জুরুল আহসান, জাহাঙ্গীর আলম, মমিনুল হক, এস এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী, মোস্তফা খান সফরী, মাহবুব ইসলাম মাহবুব, কাজী রফিক, শেখ মো. শামীম, খন্দকার মারুফ হোসেন, একরামুল হক বিপ্লব, সালাউদ্দিন ভূইয়া শিশির, জিল্লুর রহমান, সিরাজুল হক, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সুলতান মাহমুদ বাবু, মাহমুদুল হক রুবেল, ইকবাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম হিলালী, লায়লা বেগম, শামসুজ্জামান মেহেদী, আরিফা জেসমিন, রাবেয়া আলী, ডাক্তার আনোয়ার হোসেন, মোতাহার হোসেন তালুকদার, মো. ইকবাল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, শাহ মোস্তফা, মজিবুর রহমান, হাসনা আক্তার সানু, গোলাম হায়দার, কাজী মফিজুর  রহমান, ফোরকান ই আলম, মামুনুর  রশিদ মামুন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ডাক্তার মাজহারুল ইসলাম, সুশীল বড়ুয়া, বজলুুল করিম চৌধুরী আবেদ, মশিউর রহমান, ডাক্তার শাহাদাত হোসেন, শাহ আলম, আবু সুফিয়ান, ম্যামাচিং, মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, জেড এ খান মর্তুজা চৌধুরী তুলা, এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, আখতারুজ্জামান মিয়া, বিলকিস ইসলাম, সাইফুর রহমান রানা, আমিনুল ইসলাম, মীর্জা ফয়সাল, ফরহাদ হোসেন আজাদ, হাসান রাজিব প্রধান, জহিরুল বাচ্চু, মো. শামসুজ্জামান সাবু, গফুর সরকার প্রমুখ।

বৈঠক পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম। সার্বিক সহযোগিতা করেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন নসু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ। এছাড়া অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার।

গত মঙ্গলবার ঢাকা ও ফরিদপুর বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড। আজ বৃহস্পতিবার খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারেক রহমান। দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দলীয় প্রধানের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনের ধারাবাহিক বৈঠক হয়। এতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকম-লী এবং অঙ্গ-সংগঠনের মোট ২৮৬ নেতা অংশ নেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমান দলের হাল ধরেন। এরপর এটিই দলের বড় ধরনের সভা। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাহী কমিটির বর্তমান সদস্য ৫০২ জন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই