ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিভিন্ন নৌ-ঘাটে আটকা পড়েছে লাখ লাখ টন পণ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০১৬, ০১:৪৩ পিএম

সারাদেশেই নৌবন্দর ও ঘাটগুলোতে লাখ লাখ পণ্য আটকা পড়ে রয়েছে। মজুরি বৃদ্ধিও দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৩৫টি বড় জাহাজ এবং সারাদেশের ৩৬টি ঘাট এলাকায় ৬১১টি জাহাজে ১৩ লাখ টনেরও বেশি পণ্য আটকা পড়েছে। নৌ-শ্রমিকদের ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর পুরোপুরিই অচল হয়ে পড়েছে। 

কারণ চট্টগ্রাম বন্দরে যতো পণ্য খালাস হয় তার ৭০ শতাংশই বহির্নোঙরে। তবে বন্দও জেটিতে কনটেইনার ও সাধারণ পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম সচল রয়েছে। ফলে রফতানিমুখী পণ্য পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দর ও লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শ্রমিক ধর্মঘটের জের ধরে বিভিন্ন বন্দর ও নৌঘাটে বিপুল পরিমাণ পণ্য আটকা পড়ায় সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারকদের প্রতিদিনই মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে। কারণ জাহাজ ভাড়া নেয়ার চুক্তি অনুযায়ী বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণে আমদানি পণ্য খালাস করতে হয়। 

আর নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস করতে না পারলে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হয় জাহাজভেদে দৈনিক ১০-১২ হাজার ডলার। ক্ষতিপূরণের ওই অর্থ আমদানি ব্যয়ের সাথে যোগ হয়। তাতে খুচরা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেশি পড়ে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙওে বর্তমানে ৩৫টি জাহাজ থেকে আমদানি করা গম, ডাল, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথর ও সার মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টন পণ্য খালাস হওয়ার কথা। কিন্তু নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বহির্নোঙর এখন পুরোপুরি অচল। 

গত তিন দিন সেখানে কোনো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়নি। আর বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করে দেশের নানা প্রান্তের ৩৬টি ঘাট এলাকায় নিয়ে পণ্য খালাস করা হয়। ওই কাজে ৬১১টি জাহাজ নিয়োজিত রয়েছে। সে হিসাবে ধর্মঘটে ঘাট এলাকা ও নদীপথে প্রায় ৭ লাখ ২২ হাজার টন পণ্য আটকা পড়েছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন- আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ পণ্য খালাসের শর্তে জাহাজ ভাড়া নেয়া হয়েছে। কিন্তু তিন দিনে কোনো পণ্য খালাস করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারলে ব্যবসায়িদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, চার মাস আগে একবার শ্রমিক, তারপর মালিকপক্ষ কর্মসূচি পালন করল। তখন ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে আবারো শ্রমিকদের কর্মবিরতি।

ফলে পুরো দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। তা দেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। কারণ তাতে আমদানি ব্যয় বাড়বে এবং কাঁচামালের অভাবে উৎপাদনও ব্যাহত হবে। সেজন্য ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে দেশের স্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

এ প্রসঙ্গে নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম জানান, নৌশ্রমিকরাও জাহাজ চালাতে চায়। কিন্তু বারবার অঙ্গীকার করেও তাদের মজুরি বাড়ানো হয়নি। এবার মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম