ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিদ্রোহী ঠেকানো শুরু

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০১৬, ০৭:৪৯ পিএম

বিশেষ প্রতিনিধি

পৌরসভার পর এবার দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানোর কার্যক্রম শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মূলত ইউপি নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দল বড় ধরনের বিজয়ের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ইউপি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির শুরুর পর ক্ষমতাসীন দল দলীয়ভাবেও প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে গণভবনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়াসহ বিদ্রোহী ঠেকানোর কৌশল নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতেই এবার মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের বৈঠকের পর পরই সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সমর্থন আদায়ের জন্য জেলা-উপজেলাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। একই সাথে নিজ নিজ এলাকায়ও স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি এলাকার জনগণের সাথেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছাসহ দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন। ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের পর পরই তৃণমূলে ইউপি নির্বাচন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। শুধু নিজেদের দলের প্রার্থীই নয়, বিএনপিসহ অন্য দলের অনেকেই দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছে। বিশেষ করে পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার ভালো ফল আসায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য দলীয় লোকের পাশাপাশি অন্যরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে কেন্দ্রসহ জেলা-উপজেলা, এমনকি এমপিদের সাথে টেলিফোনসহ সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনা পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা হবে।

সূত্র জানায়, দেশের ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে আগামী মার্চে উপকূলীয় অঞ্চলের ৭ শতাধিক ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারপর ধাপে ধাপে সারাদেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য দেশের প্রায় সবখানেই ইউপি নির্বাচন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। জনগণের সেবার সুযোগ চেয়ে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগাম প্রচার-প্রচাারণাও চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে পোস্টার সাঁটানো, দেয়াল লিখনও অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীদের আবার একধাপ এগিয়ে দলের নৌকা প্রতীকসংবলিত রঙিন পোস্টারও সাঁটিয়েছেন এবং ডিজিটাল প্রিন্ট ঝুলিয়েছেন। অথচ নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা না করলেও এখানকার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন।

সূত্র আরো জানায়, ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন- প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় দলের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারের ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণে। ইতিমধ্যে জেলা-উপজেলাসহ সংশ্লিষ্টরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। তবে এবার কেন্দ্রে প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করার আগে সেই তালিকা একবার যাচাই-বাছাই করা হবে। যাতে কোনো স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান- পৌরসভা নির্বাচনে ভালো ফল পাওয়ায় দলের প্রত্যাশা আরো বেড়েছে। সেজন্য গত নির্বাচনের ভুলত্রুটি পর্যালোচনা করে দলের জন্য ভালো করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এবার জয়ের টার্গেট আরো বড়। তাছাড়া এবারের ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। ইতিমধ্যে বিদ্রোহী থাকার কারণও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। মূলত এজন্যই এমপিদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকম-লীর সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইউপিতে বিদ্রোহী থামানোর কৌশল কী হতে পারে আলোচনায় সেটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। দলের পক্ষ থেকেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে মাঠের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এক কথায় আওয়ামী লীগ ইউপি নির্বাচনের হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছে। এখন কেন্দ্রের নির্দেশনার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়ে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ