মুরাদের শরীরে ৯ বুলেট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬, ০৯:০০ পিএম

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় নিহত নব্য জেএমবি নেতা মুরাদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে তার আঙুলের ছাপ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য পাওয়ার পরই নিহত জঙ্গির আসল পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা থেকে এ কথা জানানো হয়।

অন্যদিকে এই ঘটনায় আহত তিন পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে ওসি (তদন্ত) শাহীন ফকিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এখনো তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত জঙ্গি মুরাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার মাথায় ৩টি ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৬টিসহ মোট ৯টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, জঙ্গি মুরাদ সঠিক পরিচয় নিয়ে রূপনগর আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসায় ওঠেননি। পুলিশের দেয়া ভাড়াটিয়া ফরমে ঠিকানাও ঠিকমতো লিখেননি। সেখানে নিজের নাম জাহাঙ্গীর বলেছেন। তিনি আরো বলেন, নিহত মুরাদ জঙ্গি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ময়নাতদন্তে নিহতের মাথায় ৩টি ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৬টি মোট ৯টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য উরুর মাংস ও চুল সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কোনো ওষুধ বা মাদক সেবন করেছিল কি না তা জানার জন্য ভিসেরা, রক্ত ও ইউরিন সংগ্রহ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার গোপন খবরের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রূপনগর আবাসিক এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পুলিশ ইন্টেলিজেন্সের ওপর নির্ভর করে রূপনগর থানা পুলিশ এই অভিযান চালায়। একদিন আগে বৃহস্পতিবার পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালাতে গেলেও বাসা বন্ধ থাকায় তারা বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করে চলে আসে। কিন্তু জঙ্গি মুরাদের দেখা মেলে না।

পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে বাসাটি সারা দিন তালাবদ্ধ থাকলেও সন্ধ্যায় জঙ্গি মুরাদ বাসায় এলে দারোয়ান বাড়ির কেয়ারটেকারকে জানায়। কেয়ারটেকার মুরাদকে দেখেন এবং বাসার ভেতরে গিয়ে দেখতে পান সে বের হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছে। এ সময় কেয়ারটেকার মুরাদকে ভেতরে আটকে রেখে বাইরে তালা লাগিয়ে দেয় এবং পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তালা খুলে বাসায় ঢুকতে গেলে মুরাদ পুলিশের ওপর প্রথমে গুলি চালায়। এরপর মুরাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মুরাদ পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি ছুরি ও চাপাতি চালায়। এ সময় আহত হন রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহিদ আলম, ওসি (তদন্ত) শাহীন ফকির ও এসআই মমিনুর রহমান। পুলিশ সদস্যদের আহত করে মুরাদ পালাতে গেলে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মুরাদ। আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে  গোলাগুলির শব্দে পুরো রূপনগর এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন দিগিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। দোকানপাট বন্ধ করে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। মিরপুর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে আশপাশের সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। নিহত মুরাদের লাশ উদ্ধার করে রাত দেড়টায় পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়।  

অভিযান সম্পর্কে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, রূপনগরের ওই বাসাটি ভাড়া নেয় মুরাদ। নারায়ণগঞ্জের অভিযানের আগে থেকেই তার এ বাসায় যাতায়াত ছিল। কিন্তু সেখানে অভিযানের পর সে আর এ বাসায় আসত না। বাড়ির কেয়ারটেকার শফিককে বলা হয়, ভাড়াটিয়া মুরাদ এলে তিনি যেন পুলিশকে সংবাদ দেন। কারণ তার (মুরাদের) মালামাল ওই বাসায় ছিল। এসব মালামাল নিতে এলেই তাকে গ্রেফতারের ফাঁদ তৈরি করে পুলিশ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন