আলেমগণের ফতোয়ায় ক্ষুব্ধ জঙ্গিরা!

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০১৬, ০৩:৪০ পিএম

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের লক্ষাধিক আলেমের অংশগ্রহণে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির উদ্যোগ মোটেও পছন্দ হয়নি জঙ্গিদের। এর বিরোধিতা করে অপপ্রচারের নামার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিতুমীর মিডিয়া থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হছে একটি ভিডিও। সেখানে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দেয়া ফতোয়াকে ‘জিহাদের’বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। জঙ্গি কার্যক্রমকে ‘মুসলিম তরুণদের জিহাদি জাগরণ’উল্লেখ করে এই কার্যক্রম বন্ধ করতে ‘দরবারী আলেমদের জিহাদবিরোধী ফতোয়া আসছে’ বলে ওই ভিডিওতে বলা হচ্ছে। এই ভিডিওটিতে ফতোয়া সংগ্রহ কমিটির প্রধান ও শোলাকিয়া ঈদগার খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। ভিডিওটিতে শাইখ তামিম আল আদনানী নামের এক ব্যক্তির কণ্ঠে সম্ভাব্য এ ফতোয়াকে জিহাদবিরোধী উল্লেখ করে এ কার্যক্রমে অংশ না নিতে আলেমদের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা নামের সংগঠনটির সদস্যদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার খোঁজ পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় এক লাখ মুফতি ও উলামায়ে কেরামের স্বাক্ষর সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই লক্ষাধিক আলেমের সই সংবলিত ফতোয়া প্রকাশ করা সম্ভব হবে মনে করেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগার খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

জানা গেছে, এ ফতোয়াকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছে উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। আল কায়দা মতাদর্শে বিশ্বাসী এ সংগঠন তিতুমীর মিডিয়া নামে প্রচারের কাজ করে থাকে। দেশে ২০০৮ সালের দিকে আনসারুল্লাহর প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু হয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মুফতি মুহাম্মদ জসীমুদ্দীন রাহমানী হলেন আনসারুল্লাহর মূল পৃষ্ঠপোষক। শুরু থেকেই এই জঙ্গি সংগঠন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এখনও বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ সাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইউ টিউবে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ভিডিওতে বলা হচ্ছে ‘মুসলিম উম্মাহ জেগে উঠছে, নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে তারা অস্ত্র হাতে ধারণ করার সংকল্প করেছে। তখনই এ জাগরণকে বন্ধ করার জন্য, মুসলমানদের ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য একদল দরবারি আলেম মুনাফিকদের সরদার আব্দুল্লাহ বিন ওবায়ের এর ভূমিকায় মাঠে নেমেছে।’

ওই ভিডিওতে তরুণদের জাগরণকে বন্ধ করার জন্য একদল শাহবাগী আলেম মাঠে নেমেছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ওই ভিডিওতে ফতোয়ায় স্বাক্ষর না করার জন্যেও আলেমদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শোলাকিয়া ঈদগার খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘জিহাদ ইসলামের একটি বিধান, আমরা সেটির বিরোধিতা করছি না। আমাদের প্রশ্ন ইসলামের জিহাদ ও সন্ত্রাস কি একই বিষয়? আমরা এ বিষয়ে আলেমদের মতামত নিয়ে ফতোয়ার কাজ করছি। ফলে এটিকে জিহাদবিরোধী ফতোয়া বলা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফতোয়ার ১১টি প্রশ্ন আছে। যারা একমত হচ্ছেন তারা স্বাক্ষর করছেন। প্রশ্ন রয়েছে, ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে কিনা— এসব বিষয়ে মত  দেবেন আলেমরা। ফলে এসব অপপ্রচার তারাই করছে যারা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে। এসব হুমকি ধামকি অনেকদিন ধরেই পাচ্ছি।  জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এসবে আর ভয় পাই না।’

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘ইসলাম কাউকে বিনা বিচারে হত্যা সমর্থন করে না। সন্ত্রাসী প্রক্রিয়া ইসলামে নেই। আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকল কার্যক্রম সমর্থন করি। যারা ধর্মের নামে খুন করছে তারা ধর্মের ক্ষতি করছে।’

এদিকে, ফতোয়ার উদ্যোগকে স্বাগত  জানিয়েছেন সিলেট কাজির বাজারের জামেয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুফতি শায়খুল হাদিস শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এতে করে পরিষ্কার হবে, দেশের আলেমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে মসজিদ-মাদ্রাসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে আর কোনও অপপ্রচারের সুযোগ থাকবে না। পাশাপাশি দেশের কোনও মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জঙ্গিবাদের পক্ষে নেয়ার পথও বন্ধ হবে।’

সোনালীনিউজ/এমএইউ