দলের দুই শীর্ষ নেতাকে সন্দেহ করছেন খালেদা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৭:০৬ পিএম

ঢাকা: সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছে নিজ দলেরই শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা, এমন সন্দেহ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাই জ্যেষ্ঠ নেতাদের এড়িয়ে দলের তরুণ ও মধ্য সারির নেতাদের ওপর তিনি বেশি আস্থা রাখতে চান। নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির এক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে কোন দুই নেতাকে সন্দেহ করা হচ্ছে তা জানাননি তিনি।

ওই নেতা বলেন, বেগম জিয়ার ধারণা- তার দলকে বিভক্ত করতে কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির দুজন নেতাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তিনি। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনাও করেছেন তিনি।

জানা গেছে, বিএনপির মধ্যসারির নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন বেশি। সম্প্রতি কয়েকজনের সঙ্গে তিনি যা বলেছেন, তার মোদ্দা কথা হলো বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতার ওপর তিনি এখন আর আস্থা রাখতে পারছেন না। অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণ ও মধ্য সারির নেতাদের তিনি বলছেন, তোমাদের ওপর আস্থা আছে, আমি কারাগারে গেলে তোমাদের কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। কারাগারে যেতে হলে তাকে ‘সাময়িক’ রাজনীতি থেকেও দূরে থাকতে হতে পারে। সে সময় বিএনপি কার নেতৃত্বে চলবে- এ নিয়ে দলের ওপর মহলে চলছে অপ্রকাশ্য আলোচনা।

এছাড়া আলোচিত ওই দুটি মামলায় তার সাজা হলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হতে পারে না এবং হতে দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার মামলার অন্যতম আইনজীবী বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলার কার্যক্রমের গতিপ্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

এদিকে, সর্বশেষ ২০ দলীয় জোট নেতাদের বৈঠকে, জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা বিএনপির দুঃসময়ে পাশে আছে। ভবিষ্যতে সুসময়েও পাশে থাকবে। এমনকি জোট শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবেন তারা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৈঠকে উপস্থিত জোটের শীর্ষ নেতারা জানান, খালেদা জিয়া পরামর্শ দিয়েছেন, এখন থেকে আন্দোলন শব্দটি নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি শব্দটি সামনে আনতে হবে। 

জোট নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, কোনোভাবেই জোট ভেঙে সরকারের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। সরকারের অনেক টাকা আছে। সরকার অনেক টোপ দেবে; কিন্তু আপনারা যাবেন না। কোনোভাবেই যেন জোট না ভাঙে, সে ব্যাপারে শরিক দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়াকে আরো বেশি গণমুখী কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দেন জোট নেতারা। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, কর্মসূচি দেয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা ও পরিস্থিতির ওপরও বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করবে। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৭টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টি ও পিপলস লীগের নেতারা। তবে লেবার পার্টিকে সংগঠনটির উপদলীয় কোন্দলে বিভক্ত নেতৃবৃন্দের কারণে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এ প্রসঙ্গে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জোট নেতারা। এছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মতুর্জা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে যাবেন না। এমনকি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই নির্বাচন হতেও দেবেন না।

এসব দাবির প্রতি জনমত গঠনে বিভাগ ও জেলায় সফর ও সমাবেশ করা উচিত। নেতাদের বক্তব্যের প্রতি সম্মতি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, নতুন বছর নয়- এ মুহূর্ত থেকে জনমত গঠনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা বিএনপির দুঃসময়ে পাশে আছে। ভবিষ্যতে সুসময়েও পাশে থাকবে। এমনকি জোট শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবেন তারা।

এছাড়া দলীয় একটি সূত্র জানায়, আগামী মাসের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল দেয়া হয়েছে। এই সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী জামায়াতসহ অন্যান্য শরিক দলের কেউ থাকলে নাম দিতে বলেছেন খালেদা জিয়া।

সোনালীনিউজ/জেএ