চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৌশলী বিএনপি

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮, ০৩:১৬ পিএম

ঢাকা : দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, আইনি লড়াই, দলীয় কোন্দল মেটানো এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ চতুর্মুখী চ্যালেঞ্জে রয়েছে বিএনপি। একদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দলটি।

অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যু তো আগে থেকেই রয়েছে। এসবই শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলা করতে চায় বিএনপি। কারণ দীর্ঘ আন্দোলনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের।

তাই পর্যায়ক্রমে অহিংস আন্দোলনকে গতিশীল করতে চায় দলটি। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে চূড়ান্ত সফলতা অর্জন তাদের টার্গেট। এ লক্ষ্যে কৌশলে এগুতে চায় দলটি।

বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই জানতেন এ মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হবে। বেগম খালেদা জিয়া নিজেও জানতেন ব্যাপারটা। আর তিনি জেলে যাওয়ার পর কখন মুক্ত হবেন তা অনিশ্চিত।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে বিএনপিকে নির্বাচন নিয়েই আন্দোলন করতে হতো। এখন বেগম জিয়া জেলে যাওয়ায় এ আন্দোলন আরো বেগবান হবে বলে মনে করছে নেতারা।

তবে তারা সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। কেননা অতীতে বিএনপির আন্দোলনকে সহিংস হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এবার যাতে এ অভিযোগ না ওঠে সে দিকে সতর্ক রয়েছে বিএনপি।

কিন্তু বিএনপির গত দু’দিনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশ বাধা দিয়েছে এবং লাঠিচার্জ করেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে মামলা দেয়া অব্যাহত রয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি বিএনপি নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

তবু বিএনপি কোন প্রকার উস্কানিতে সহিংস আচরণ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। আগের মতো এ আন্দোলন অল্প কয়েক দিনের নয়। অন্তত পক্ষে টানা একবছর তাদের এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এমন কী তা আরো দীর্ঘায়িতও হতে পারে। শুধু চেয়াপার্সনের মুক্তি নয়, আগামী নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচনে জয়–পরাজয়ের বিষয়টিও এবারের আন্দোলনের উপর নির্ভর করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

চেয়ারপার্সন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন বিদেশে। আর তার বক্তব্য প্রচার করাও মিডিয়ার জন্য নিষিদ্ধ। দলের বেশকিছু নেতাদের মতবিরোধও কম নয়। এ অবস্থায় কার নির্দেশে ও কোন নেতৃত্বের অধীনে বিএনপির আন্দোলন চলবে? এ প্রশ্নও রয়েছে অনেকের মধ্যে। এসব প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

তারা বলছেন, দলের চেয়ারপার্সন কারাগারে যাবেন এ প্রস্তুতি আগেই ছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় দল কিভাবে চলবে, আন্দোলন কিভাবে হবে। কি ধরনের আন্দোলন হবে, এসব বিষয়ে আগেই নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি। আর তিনি কারাগারে থাকলেও ঢাকায় অবস্থান করছেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাগারে যাওয়ার পর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। প্রথম দিন সাজা হওয়ার পর সারাদেশে শান্তিপূর্ণ ছিল বিএনপি। পরবর্তী দু’দিন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। কিন্তু পুলিশ বাধা দিলেও কোথাও পুলিশের উপর হামলার খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আরো তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে। পর পর দুই দফায় কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে আগে থেকেই ঠিক করা এসব কর্মসূচি। কেননা দলীয় নেতাদের কোন ধরনের বৈঠক ছাড়াই এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীতেও এভাবেই কর্মসূচি দেয়া হবে।

সরকার তাদের এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যত বাধা দেবে বিএনপির জনপ্রিয়তা ততই বাড়বে বলে মনে করছে বিএনপি। এক পর্যায়ে জনগনকে নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন করতে পারবে বলে মনে করছে নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চেয়াপার্সন যেখানেই থাকেন না কেন তার নেতৃত্বেই বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তার নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে দলীয় নেতাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন।

এদিকে রাজনীতি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞগন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। বেগম জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করা হলে নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আগেই দ্রশুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, যেখানে আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি, সেখানে গ্রেফতার ও কারাদণ্ডের বিষয়টি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এর ফলে চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমাধানে না এলে দেশ আবার চরম অনিশ্চয়তার মধ্য পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

এদিকে বেগম জিয়ার কারাদন্ডে ইতিবাচক দিকও দেখছেন কেউ কেউ। তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার এই দন্ড বিএনপিকে আন্দোলনে বেগবান করবে। আর তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করবে। জেল থেকে বের হয়ে আসলে তার প্রতি জনগনের সহানুভূতি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না-ও পারেন, তবুও তিনি যদি জামিনে থাকেন এবং প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারেন তাহলে এই কারাদণ্ড বিএনপির জন্য নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক হতে পারে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি