বিএনপির ‘খারাপ’ সময়ে বেঁকে বসলো শরিকেরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০১৮, ০৪:৫৭ পিএম

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আছেন বিদেশে। দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই ও রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। এতে পরোয়া করছে না সরকার, আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনও হচ্ছে না খালেদা জিয়ার। উল্টো সুযোগ পেলেই বিভ্ন্নি মামলায় দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দলটির শীর্ষ নেতাদের অর্থনৈতিক লেনদেনের অনুসন্ধান শুরু করেছে।

দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলের এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই বেকে বসলো ২০-দলীয় জোটের শরিকেরা। জোটের কোনো কোনো শরিক দল মনে করছে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এখনই বিএনপির কাছ থেকে সব হিসাব-নিকাশ বুঝে নিতে চায় তারা। আগামী নির্বাচনে কোন শরিককে কতটি আসন ছাড় দেয়া হবে, সে ব্যাপারে এখনই বিএনপির কাছ থেকে সুস্পষ্ট আশ্বাস চাওয়া হচ্ছে।

২০-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিভিন্ন সময়ে কেউ কেউ হয়তো চলে গেছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০-দলের ঐক্য অটুট আছে। এটা থাকবে। জোটের বৈঠকে সর্বসম্মতিতে করণীয় ঠিক করা হয়। এগুলো জোটের দলগুলো মেনে চলে। খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে। সে কারণে জোটে বর্তমানে ক্রান্তিকাল, ভঙ্গুর অবস্থা চলছে। এ থেকে উত্তরণে বিএনপিকে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার।

গত ৩ এপ্রিল মঙ্গলবার রাজধানীতে ২০ দলের অন্যতম শরিক এলডিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখার সম্মেলনে জোটের শরিক নেতারা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে এখনই ফয়সালা করার দাবি তোলেন। সম্মেলনে বিএনপির প্রতি ‘কঠোর বার্তা’ ছুড়ে দেন শরিকেরা। বিএনপির দুজন দায়িত্বশীল নেতা বলছেন, তাঁরা খোঁজ নিয়েছেন, সম্মেলনে জোটের দলগুলো যে অবস্থান তুলে ধরেছে, তা ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

দলটির সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান আহমেদ বলেন, যারা যোগ্য, তাদের কাজ করতে বলেছি। আশা করি বিএনপি, এলডিপি সভাপতিসহ নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে। দশম সংসদ নির্বাচনে এলডিপি অংশ নিলে দশটি আসন, দুজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দেয়ার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

এর আগে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর গত ২ মার্চ জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একটি প্রার্থী তালিকা গণমাধ্যমের হাতে আসে। এ ছাড়া জোটের নিবন্ধিত দলগুলোও নিজেদের দলীয় প্রার্থী নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা করেন, পরে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

গত ২৪ মার্চ জোটের বৈঠক ডাকা হয়। ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত হয়। 

বিএনপি নেতারা জোটের শরিকদের এ অবস্থানকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তি ছাড়া এখন অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপি ও জোট কাজ করছে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির পর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ২০-দল নির্বাচনে যাবে। তখন আসন ভাগাভাগির বিষয়টি আসবে।

এখনই আসন ভাগাভাগির দাবিতে বিএনপি কিছুটা বিস্মিত হয়েছে দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, রাজনীতিতে এটা অস্বাভাবিক নয়। জোটের শরিক দলগুলো ‘সুযোগ নিচ্ছে’। এর পেছনে সরকারের মদদও থাকে। জোটের জন্য বিএনপির একজনকে সমন্বয়কারী করা হয়েছে। তাই মনে করি না যে জোট ভাঙার মতো অবস্থা হয়নি। হয়তো তারা তাদের হিসাব-নিকাশ বুঝে নিতে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শরিকদের চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। কিন্তু এর মানে এই না যে জোটে ভাঙন হবে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বিএনপি ও জোট ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করছে।

সোনালীনিউজ/জেএ