কেন সফল হচ্ছে না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১, ২০১৮, ০৮:৩০ পিএম

ঢাকা: ‘সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়’- খোদ দলের আইনজীবী নেতাদের এমন বক্তব্যে হতাশ দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের ক্ষোভ, এ ইস্যুতে আইনজীবীরা কেন আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না। এর জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, যারা এমন অভিযোগ করেন তারা কী করেন? তারা কেন রাজপথে নামেন না। যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, তখন কেন তারা পথে নামেননি।  

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আসলে আইনজীবীরা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেননি, কিন্তু বাস্তবতা তো এমনই। আদালত পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আদালতের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেই খালেদা জিয়া এখনো কারাগারে। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন সব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে এই সরকার। হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে তা স্থগিত করা হয় এই ৫ বছরের সাজায়- ইতিহাসে এর নজির নেই। মাত্র ৩-৪ মাসের মধ্যে আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার নির্দেশও নজিরবিহীন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লাভবান তাদের দলের আইনজীবীরা। তারা যেমন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন, তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন। দলের আইনজীবী হলেও তারা টাকা ছাড়া নেতাকর্মীদের মামলা লড়ছেন না। ছাত্রদলের ওই নেতা বলেন, কে কার আগে মিডিয়ায় ফোকাস হবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে লড়াই চলে। সিনিয়র-জুনিয়র মেইনটেইন করা হচ্ছে না। এতে করে আদালতেও মামলা পরিচালনায় সমস্যায় পড়ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবীরা। প্রায়ই বিচারকরা বিব্রত হচ্ছেন। বিচারকরা সিনিয়র আইনজীবীদের বলেছেন জুনিয়রদের থামাতে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা বলেন, বিএনপির অভিযোগ আদালত সরকারের নির্দেশে কাজ করছেন। তাহলে সেই আদালতের বিরুদ্ধে কেন কোনো কর্মসূচিতে যান না দলের আইনজীবীরা। আজ পর্যন্ত একদিনও ঘোষণা দিয়ে আদালত বর্জন করতে পারেননি তারা। অর্থের লোভে তারা আদালত বর্জন করতে পারছেন না। আদালতও তাদের পাত্তা দিচ্ছেন না। এদিকে গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার চার আইনজীবী। পরে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে তাকে। 

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তাদেরকে বলেছেন, সরকার তাকে কারাগারে রেখে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায়।  অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৬টি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট রয়েছে। এর মধ্যে দলের আইনজীবীরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় কুমিল্লার দুটি নাশকতার মামলা ও নড়াইলের মানহানির একটি মামলায় জামিনের আবেদন করেছেন।  

খালেদা জিয়ার জামিন এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না।  

তিনি বলেন, নিন্ম আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েকটি মামলায় তারা জামিন চেয়েছিলেন। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো কোনো মামলায় শুনানির জন্য দীর্ঘ সময় দিয়ে তারিখ ধার্য করা হচ্ছে। যা সচরাচর অন্য মামলার ক্ষেত্রে ঘটে না। কুমিল্লার একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে সহ-আসামি করা হয়েছে। এই মামলার সব আসামি জামিনে রয়েছেন। সে হিসেবে খালেদা জিয়াও জামিন পাওয়ার হকদার। কিন্তু আদালত তা না করে অধিকতর শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন।  

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৩টি, ঢাকায় ২টি ও নড়াইলের ১টি মামলায় তিনি জামিনে নেই। কারামুক্তি পেতে এসব মামলায় তাকে জামিন নিতে হবে।     

সোনালীনিউজ/জেএ