প্রার্থী হতে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র লাগবে

ভোটের জালে ঋণখেলাপিরা

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৮, ০৬:২১ পিএম

ঢাকা : নির্বাচনের দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে ৩০ অক্টোবরের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। দফায় দফায় বৈঠক করছে কমিশন। নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সংস্থাটি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আগ্রহীরা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সরব থাকলেও দলটি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরাও একধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

আসন্ন নির্বাচনে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জালে পড়তে হবে আগ্রহী সব প্রার্থীকে। ঋণখেলাপি নন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সনদ মিললে হতে পারবেন প্রার্থী। যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থী হতে ব্যাংকের দায় ঋণ পরিশোধ কিংবা পুনঃতফসিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। সে মোতাবেক কোনো ব্যক্তির যদি এক টাকাও ঋণ থাকে তার রিপোর্ট পাঠাতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। ফলে ছোট-বড় আকারের যে ঋণই থাকুক না কেন তা নিয়মিতকরণ করতে হবে। এবারই প্রথম ব্যাংকে যেকোনো পরিমাণের দায়ে আটকে যেতে পারে প্রার্থিতা। আগে নির্ধারিত শাখা অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ম্যানেজ করে ছাড়পত্র নিলেই প্রার্থী হওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এবার প্রার্থী হতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ও স্বতন্ত্রসহ সব প্রার্থীর তালিকা কমিশন থেকে যাচাই-বাছাই করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো-সিআইবি যাচাই করে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ব্যাপারে তথ্য দেবে। সেখানে কারো নাম ঋণখেলাপির তালিকায় থাকলে কমিশন তাকে অযোগ্য ঘোষণা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাংকগুলোর পুরনো ঋণের অর্থ আদায় বাড়ে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। পুরো ঋণ পরিশোধ করেন না প্রার্থীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যাংকগুলো থেকে ঋণখেলাপিদের তালিকা নিয়ে সিআইবি হালনাগাদ করতে শুরু করেছে। তথ্য চাওয়া হয়েছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরির আওতায় থাকা ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি গ্রাহকেরও।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদে বসতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অর্ধশতাশিক ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে বড় সংখ্যকই নতুন মুখ। তারা এলাকায় যাতায়াত করছেন। কর্মীদের সংগঠিত করার কৌশল নিয়ে কাজ করছেন। আর দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় লেভেলে রাখছেন নিবিড় সম্পর্ক। তাদের অনেকের ব্যাংকে বড় আকারের ঋণ রয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি বলছে, দেশের বর্তমান সংসদেও বড় সংখ্যক সদস্য কোনো-না-কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। জরিপ মতে, বর্তমান সংসদের ৫৯ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী।

দোহার নবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতির বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। অগ্রণী ব্যাংকের কাছে তার বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি ব্যাংকটির কাছে পাওনা ঋণের অর্থ পরিশোধে বড় ছাড় চেয়ে আবেদন করেছেন। ঋণের সুদ-আসলসহ ৫৫০ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে তিনি ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে সিআইবি নিজের পক্ষে নিতে চাইছেন।   

বিজিএমইএ’র বর্তমান সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি নির্বাচন করতে চান ঢাকা-১৬ আসন থেকে। তার খেলাপি ঋণ ১০৯ কোটি টাকা। তিনি এরই মধ্যে ব্যাংকে যোগাযোগ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। জুন প্রান্তিক শেষে ৫৭টি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।

বর্তমান সংসদে থাকা আওয়ামী লীগের সাংসদ আসলামুল হক ঋণখেলাপি হয়েছেন। তার নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটির কাছে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকেরই পাওনা ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যার বড় অংশই খেলাপি হয়ে গেছে। রাজশাহীর এমপি এনামুল হকের নর্দান পাওয়ার সল্যুশন শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায়। প্রার্থী হতে হলে তাকে ঋণ পরিশোধ করে নিতে হবে সিআইবি সনদ।

বিকল্প ধারার মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে তাকেও সিআইবির মুখোমুখি হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচনে কে প্রার্থী হতে পারবেন বা পারবেন না সেটি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। আমরা কমিশন থেকে যে তালিকা পাব সেটি যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঋণখেলাপি কি না সেই রিপোর্ট দেব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই