বিএনপির সামনে রাজপথের বিকল্প নেই

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৮, ০৭:৩১ পিএম

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপি। কারণ সাত দফার একটিও মানেননি প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদ ভেঙে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনো আশ্বাস মেলেনি। এজন্য রাজপথেই এসব দাবির সমাধান খুঁজছে বিএনপি।

আন্দোলনের সূচনা হিসেবে আগামী ৬ জুন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দিকনির্দেশনা আসবে এই সভা থেকেই। নেতাদের ভাষ্য, এবার আন্দোলনের সফলতার ওপর নির্ভর করছে দলের অস্তিত্ব। হেরে গেলে প্রভাব পড়বে ব্যক্তিজীবনেও। তাই আদাজল খেয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি সবার।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের পরদিন গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল কী পেল বিএনপি। সংলাপের পর নেতাদের মধ্যে রাতেই আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা হয়েছে। লন্ডনে দলের শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও জানানো হয়েছে। এসব আলোচনায় নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে ধরে নিয়েই আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের এরই মধ্যে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, সাত দফার মধ্যে বিএনপির প্রধান দাবি হচ্ছে— নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদ ভেঙে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি। এই তিনটি বিষয়ে সুরাহার কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি সংলাপে।

নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সংবিধানসম্মতভাবেই ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বর্তমান সঙ্কট নিরসনে একাধিক বিকল্প তুলে ধরেন। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ারও একটি রূপরেখা দেন। জবাবে সংবিধানের দোহাই দিয়েই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা কোনোভাবে সম্ভব নয় বলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

১/১১-এর প্রসঙ্গ টেনে এদেশে নিরপেক্ষ কে তা জানতে চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। এ সময় বিএনপি নেতারা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাও বলেন। জবাবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সে সময়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। এখন ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই। যদি পরিস্থিতি থাকত তাহলে জনগণ আন্দোলন করত। এখনো প্রয়োজন হলে জনগণ আন্দোলন করবে। পারলে আন্দোলন করেই এই দাবি আদায় করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেওয়া হয় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপি নেতারা বললে জবাবে ক্ষমতাসীনরা জানায়, এটি পুরোপুরি আদালতের বিষয়। তবে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা গায়েবি রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে তদন্ত করে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি; শুধু তার ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন। নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ ভাঙা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়েই কোনো সুরাহা না হলে প্রধানমন্ত্রীর ওপর কী জন্য আস্থা রাখতে হবে, তা এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রশ্ন। সঙ্গতকারণে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সংলাপের পর থেকে গতকাল দিনব্যাপী উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মীও সংলাপের প্রকৃত বিষয়বস্তু জানতে আগ্রহী ছিল। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল তা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছে অনেকে। তারা জানতে পেরেছে, কোনো দাবিই মানেনি ক্ষমতাসীনরা।

এরপরও কেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ‘সংলাপ ভালো হয়েছে?’, বিএনপি মহাসচিব ‘সন্তুষ্ট হতে পারিনি’-এই বক্তব্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন? এই নিয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ। নেতাকর্মীদের ক্ষোভ কমাতে সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির শীর্ষ নেতা যে মন্তব্য করেছেন তা কৌশলগত কারণে। সমঝোতার মাধ্যমে শেষ চেষ্টা করা হবে, না হলে আন্দোলন। সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন নেতারা।
তফসিল ঘোষণা করা হলে ওইদিন থেকে আন্দোলন শুরু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে দেশব্যাপী দলের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের আগেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর আগে গ্রেফতার এড়িয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পক্ষে। তবে ২-৩ জন নেতা মনে করেন সব দাবি আদায় সম্ভব না হলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এখনো আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। এ লক্ষ্যে আলোচনার জন্য আরো কিছু সময় নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ক্ষমতাসীনরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে না- এমন কথা সাফ জানিয়েছে বিএনপি নেতারা। তারা এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে চান, যাতে ক্ষমতাসীনরাই আলোচনার উদ্যোগ নেয়। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করেন।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সাত দফার কোনোটিই তো মানা হয়নি। বরং সরকারদলীয় লোকজন নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

সংলাপে না থাকলেও এর প্রাপ্তির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সংলাপের ফল শূন্যের কোঠায়। কোনো দাবি তারা মানবে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই