বিএনপির ভোটের সিদ্ধান্তে সরগরম নয়াপল্টন

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০১৮, ০৭:৪৫ পিএম

ঢাকা : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই নেতাকর্মীরা কার্যালয়মুখী হতে শুরু করেন। সন্ধ্যা নাগাদ পুরো কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে যেমন আনন্দ দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও।

এদিকে কার্যালয়ের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য থাকলেও এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগ ও ভীতি লক্ষ করা যায়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও তেমন তৎপর দেখা যায়নি। রোববার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে কার্যালয়ে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামীকাল সোম ও মঙ্গলবার দুই দিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে তাদের দল।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হবে। রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সোমবার (১২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় নেতারা এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান বিষয়টি রোববার রাতে নিশ্চিত করেছেন।

দলের ওই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সোমবার (১২ নভেম্বর) সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। পরে আইনজীবীদের মাধ্যমে তার স্বাক্ষর আনা হবে।

খালেদা জিয়ার জন্য কয়টি ফরম কেনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বগুড়ার গাবতলীর জন্য একটি, ফেনীর পরশুরামের জন্য একটিসহ ৩টি ফরম কেনা হবে।

‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে কেন কেনা হবে তার ফরম?’- জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাই ফরম কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার খবরে কার্যালয়ে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা। তাদের অনেকেই বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো যাবে তো? নাকি আগের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এলাকাছাড়া হতে হবে। এমনিতেই প্রতিটি এলাকার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী কারাগারে। তাদের জামিনের বিষয়ে কী হবে? নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীরা জামিনে মুক্তি পাবেন তো?

কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করা রিজভী বলেন, মনোনয়ন ফরম ছাপানো শেষ হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কয়েকটি গ্রুপ করা হবে। এসব গ্রুপের সদস্যরা বিভাগওয়ারি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবেন। বিভিন্ন ফ্লোরে বিভিন্ন বিভাগের মনোনয়ন ফরম রাখা হবে।

কার্যালয়ে আসা যুবদল নেতা আবদুল খালেক বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। তবে ফ্রন্টের সাত দফা দাবির একটাও সরকার মেনে না নেওয়ার পরও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক হয়েছে, তা সময় বলে দেবে। তিনি বলেন, ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত সরকার কী আচরণ করে, তা দেখে প্রয়োজনে নির্বাচন থেকে সরে আসার সুযোগও নিশ্চয়ই থাকবে।

ফেনী জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দলের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভালো লাগছে না। তার জন্য মন কাঁদছে। নেত্রী জেলে থাকবেন আর বিএনপি নির্বাচনে যাবে- এমন সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।

দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে এসেছিলেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন। সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই