বাম দলগুলোতে ধোঁয়াশা

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০১৮, ১০:১৪ পিএম

ঢাকা : সাম্প্রতিক কয়েকটি নির্বাচনে ভোটের বিচারে নির্ণায়ক কোনো শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে না পারলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে বাম দলগুলো। বাম গণতান্ত্রিক জোট গড়ে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া দলগুলোর নেতারা বলছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে নয়, আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-খালেকুজ্জামান)সহ মোট আটটি দল এই জোটে থাকলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে তিনটির।

বামফ্রন্ট থেকে রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে যোগ দেওয়ার পর সম্প্রতি সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বে অন্য কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছে এই বাম গণতান্ত্রিক জোট।

১৯৯১ সালের পর এই দলগুলোর কোনোটি সংসদে কোনো আসন পায়নি। নবম সংসদ নির্বাচনে সিপিবি ও বাসদের ভোট ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ করে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও জোট-মহাজোটের ডামাডোলে ভোটের রাজনীতিতে বাম দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটা অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন, সেই দাবিগুলো উত্থাপন করে আমরা সংগ্রাম করে আসছি। নানা নির্যাতন উপেক্ষা করে আমরা এই সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি।

দেখা গেল যে, সরকার আমাদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু বিনা চ্যালেঞ্জে আমরা এটা দিতে পারি না। সেই জন্য আমরা সংগ্রামের কৌশল হিসেবে দাবি ও আন্দোলন অক্ষুন্ন রেখে নির্বাচনের সংগ্রামের পথে যাচ্ছি।’

দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরে একের প্রতি অন্যের আস্থাহীনতার প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজিনির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে তুলেছিল বাম জোট। কিন্তু তার কোনোটিই পূরণ হয়নি।

সিপিবি সভাপতি সেলিম আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তারা মানুষকে ধারণা দিয়েছে যে তাদের ভেতরকার দ্ব›দ্বই সমাজের দ্ব›দ্ব। কিন্তু আসল দ্ব›দ্ব হল সমাজের এক শতাংশ লুটেরা গোষ্ঠীর সঙ্গে ৯৯ শতাংশ জনগণের স্বার্থের দ্ব›দ্ব। দুই দলের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়লে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসবে না। বাম গণতান্ত্রিক জোট সবসময় ৯৯ শতাংশ মানুষের পাশে ছিল, আছে, থাকবে।’

নির্বাচনের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের জোট শক্তিশালী করাও লক্ষ্য বলে জানালেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি বলেন ‘গত দুই বছর ধরে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, এর ফলাফল এই জোট। আমাদের বিশ্বাস, আসন্ন নির্বাচন এই জোটকে আরও শক্তিশালী করবে।’

বাম জোটে সিপিবি-বাসদ ছাড়াও রয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এর মধ্যে সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নিবন্ধন রয়েছে। বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বাম দলগুলো, যা নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এ বিষয়ে বাম জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এটা নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। আমাদের ও তাদের (বিএনপি-জামায়াত) মধ্যে মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আর জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কারা সবসময় রাজপথে থাকে, মানুষের পাশে থাকে, তা সবাই জানে।’

বাম জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনকে আমরা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখি না। এটা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের অংশ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠক তৈরির অন্যতম সুযোগ।’

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিপিবির মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল ১৪-১৮ নভেম্বর। এই সময়সীমার মধ্যে শতাধিক নেতা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানান প্রিন্স।

বাসদের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয় ১৬ নভেম্বর থেকে। প্রায় ১০০ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানান দলটির নেতারা। প্রার্থিতার বিষয়ে প্রিন্স বলেন, ‘আমরা মনোনয়ন ফরম বিতরণের ক্ষেত্রে তাদেরকেই প্রাধান্য দিচ্ছি, যাদের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার কমিটমেন্ট রয়েছে।’

সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, ‘আমাদের যার যার দল তাদের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নামগুলো দিলে আমরা একত্রে বসে জোটের নেতৃত্বে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করব। তৃণমূলের কর্মী, ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ের কমিটির মতামতকে মূল্য দিয়েই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

আগেও দেখা গেছে, জোটে থাকলেও একই আসনে সিপিবি ও বাসদ উভয় দলেরই প্রার্থী ছিল নির্বাচনে। এবার তেমনটা ঘটতে পারে কি না- প্রশ্ন করা হলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘না, ওই ধরনের আশঙ্কা নেই। তবে সময় একটু কম। যদি দেখা যায় একটি আসনে একাধিক দলেরই প্রার্থী আছে, এটা ফয়সালা করার জন্য তৃণমূলে গিয়ে আলোচনা করে তারপর একটা সমঝোতা করা হবে।’

প্রভাবহীন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে  আসছে বাম জোট। সরকার নির্বাচন কমিশনের উপর প্রভাব বিস্তার করছে বলেও অভিযোগ তাদের। তেমন ঘটতে থাকলে কী করবেন- জানতে চাইলে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, ‘জনগণ যেমন পুলিশকে মোকাবেলা করে আন্দোলন এগিয়ে নেয়, সরকারের ষড়যন্ত্রকেও মোকাবেলা করে তারা এগিয়ে যাবে, এটাই আমরা আহ্বান জানাব।’

যে কোনো স্বৈরাচার হোক এবং একনায়কত্ববাদী শাসক হোক, তাদের পরিকল্পনা জনগণের শক্তিতেই নস্যাৎ করা সম্ভব। যদি ষড়যন্ত্র করে অন্য কোনো দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করার জন্য চেষ্টা করা হয়, তাহলে আমাদেরও নতুন করে ভাবতে হবে’- বলেন সিপিবি সভাপতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই