রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০১৮, ০৯:২২ পিএম

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্টকে মহাজোট থেকে আলাদা করা এবং বিএনপি থেকে ঐক্যফ্রন্টকে বের করে আনার একটি রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। এই মেরুকরণের প্রধান উদ্যোক্তা হলো বিদেশি কয়েকটি দূতাবাস।

রোববার (২৫ নভেম্বর) দূতাবাসগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক‚টনীতিকরা অধ্যাপক বি. চৌধুরীর বাসায় তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, যুক্তফ্রন্ট যদি মহাজোটে যোগ দেয় এবং বিএনপির নেতৃত্বে যদি ড. কামালরা থাকেন তাহলে রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের কোন সম্ভাবনা থাকবে না বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তাই, তৃতীয় শক্তির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেটা জাগিয়ে রাখার জন্য কূটনীতিকরা নির্বাচনে একটি নতুন মেরুকরণের প্রস্তাব দিচ্ছেন দুই জোটকে।

সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন হলেও এই জোটের মূল দল বিএনপি। বিএনপিই এখন ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্বাচনে কতজন প্রার্থী দেওয়া হবে, কাদের প্রার্থী করা হবে, না হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো ড. কামাল হোসেন নয়, বরং লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াপারসন তারেক রহমানই নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরুর দিকে যেমন ড. কামাল হোসেনকে গুরুত্ব ও কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল তা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে বলেই জানা গেছে। এছাড়া আসন ভাগাভাগি নিয়েও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। জোট গঠনের শুরুর দিকে বলা হয়েছিল আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সম্মানজনক ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, এখন আর তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। বরং ঐক্যফ্রন্টকে ২০ থেকে ২৫টি আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যদি ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দল একসঙ্গে নির্বাচন করে তাহলে ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মতো নেতাদের জামাতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ এতে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে। এ কারণে তারা ঐক্যফ্রন্ট থেকে ড. কামাল হোসেনদের আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু বিএনপি-জামাত ঐক্য আছে এবং বিএনপি জামাতকে ছাড়েনি সেজন্য ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্যটাই অর্জিত হবে না। এ কারণে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপি বাদে বাকি দলগুলোকে আলাদা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা ভাবছে বিদেশি কূটনীতিকরা। এ লক্ষ্যে গত দুদিন ধরেই তারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা প্রস্তাব করেছেন যে, বিএনপি ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের বাকি দলগুলো এবং যুক্তফ্রন্ট যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তবেই তৃতীয় শক্তির উদ্ভবের সম্ভাবনা রয়েছে।

কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ড. কামাল হোসেনদের এই প্রস্তাব নিয়েই অধ্যাপক বি. চৌধুরীর বাড়িতে ধরনা দিয়েছেন কয়েকটি দেশের কূটনীতিক। অন্য একটি সূত্র বলছে যে, তৃতীয় শক্তির উত্থান নয়, বরং মহাজোট থেকে যুক্তফ্রন্টকে আলাদা করতেই চীন তৎপর হয়েছে।

তবে, অধ্যাপক বি. চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একজন বলেছেন, বিদেশি কূটনীতিকরা এসেছিলেন নির্বাচনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শক্তি কোনো বিষয় নয়। নির্বাচনের আগে এ ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা একটি স্বাভাবিক রীতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই