ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার প্রচারণা কর্মকাণ্ডে নজর রাখছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এসব প্রার্থী কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের তৎপরতার সঙ্গে লিপ্ত হচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। জামায়াতের ২২ নেতা ধানের শীষ নিয়ে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে ৩ প্রার্থী বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
জামায়াতের ২৫ নেতা বিএনপি ও স্বতন্ত্র হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে এক ধরনের কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, নিবন্ধন না থাকায় নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিতে পারছে না স্বাধীনতাবিরোধী দলটির। এ প্রক্রিয়াকে দলের অপকৌশল হিসেবে দেখছেন তারা। বলছেন, দলটি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের ওই আপিল এখনো অনিষ্পন্ন। নিবন্ধন নিয়ে জটিলতায় দলের ২২ প্রার্থী বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে এবং ৩ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
জামায়াতের এই ২৫ প্রার্থীর নির্বাচন করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. আলী হোসেন, মো. এমদাদুল হক ও হুমায়ুন কবির। হাইকোর্ট তিন কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির আদেশ দেন নির্বাচন কমিশনকে। গত রোববার নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেয়।
জামায়াতের এই ২৫ প্রার্থী হলেন খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, পিরোজপুর-১ আলহাজ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, দিনাজপুর-১ আসনে মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান ও কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে দেশজুড়ে নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় জামায়াত শিবির ক্যাডাররা। তারা রেললাইন উপড়ে ফেলে, বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালায়। এতে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়।
এ ছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃঢ়তায় তাদের সেই মিশন ভেস্তে যায়। সেই জামায়াতের ২২ নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতীকে অংশ নিচ্ছে। তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসবে।
প্রার্থী হয়ে এই নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নাকি নির্বাচন নিয়ে কোনো ছক কষছে তা নজরদারি করছে গোয়েন্দারা। তারা কোথায় ও কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তাদের সার্বিক গতিবিধি দেখা হচ্ছে। কোনো নাশকতা পরিকল্পনার চেষ্টা করলে এদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা আছে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। দল হিসেবে এরা নিবন্ধন হারিয়ে এখন অন্য দলের ওপর ভর করে নির্বাচন করছে। এমনিতেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক বৈরী। নির্বাচনের নামে এরা কোনো নাশকতায় লিপ্ত হয় কি না তা দেখা গোয়েন্দা সংস্থার রুটিন ওয়ার্ক। দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে আমরা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করি। যেকোনো মূল্যে রাষ্ট্রবিরোধী এবং দেশে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের ঠেকানো আমাদের কাজের অংশ।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, এরা আজকের কাল কেউটে নয়, একাত্তরে তাদের দল জামায়াত বিষধর ফনা তুলে ছোবল দিয়েছিল। ২০১৩-১৪ সালেও নির্বাচন বানচাল করার নামে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে দেশকে নরকে পরিণত করার চেষ্টা করেছে। এখন তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। জনগণ এতটা বোকা নয়। এবার জনগণ ঠিকই তাদের বিপক্ষে ম্যান্ডেট দিয়ে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, নিজেদের দলের ব্যানারে নির্বাচন না করতে পেরে তারা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সাধারণ মানুষ এত বোকা নয়, অনেক সচেতন। এবার তারা কোনো আসন পাবে বলে আমার কাছে মনে হয় না। তিনি আরো বলেন, এদেরকে গোয়েন্দা নজরদারি জরুরি এজন্য যে এরা যেকোনো সময় সুযোগ পেলে নাশকতামূলক তৎপরতা বা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই