ঝিমিয়ে পড়েছে বিনিয়োগ

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম

ঢাকা : বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ তলানিতে নেমে গেছে। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে বিনিয়োগ। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানের ওপর। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামাল দিতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণপ্রবাহ বাড়লেও বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে তা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, আগ্রাসী ধারা থেকে ফিরে নিয়মের মধ্যে আসার চেষ্টায় ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমেই চলেছে। বেসরকারি খাতে গত নভেম্বরে ঋণপ্রবৃদ্ধি ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এর আগে গত ২০১৫ সালের নভেম্বরে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। মূলত নির্বাচনের বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণে লাগাম টানতে গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের টানাটানি তৈরি হয়েছে। এতে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বেসরকারি খাতে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের নভেম্বরে যা ছিল ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। এই সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঋণপ্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তা ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়। এরপর গত বছরে আগস্টের আগে কখনোই ঋণপ্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের নিচে নামেনি। গত বছরে আগস্টে ঋণপ্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়। এর পর থেকেই এই ধারা কমে আসছে।

ঋণ কমানোর বিষয়ে কয়েক দিন আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মূলত ৩টি কারণে ঋণ বিতরণ কম হয়েছে। প্রথম ঋণের সুদহার কমানোর চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কাছে আসায় প্রকৃত উদ্যোক্তাদের চাহিদা কম এবং ব্যাংকগুলো কিছুটা সতর্ক ছিল। তৃতীয়ত, এডিআর-সীমা লঙ্ঘিত হওয়ায় তা নিয়মের মধ্যে আসার প্রচেষ্টা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে গত ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ঋণ চাহিদা ব্যাপক বাড়তে থাকায় তারল্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। এক অঙ্কের নিচে নেমে আসা ঋণের সুদহার বেড়ে দুই অঙ্কে উঠে যায়। অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিতে শুরু করে। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ব্যাংক খাতের এডিআর কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে আবার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি এক বৈঠক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে আশানুরূপ হারে আমানত পাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক।

বর্তমানে যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ওপরে রয়েছে, নানা উপায়ে তারা তা সমন্বয়ের চেষ্টার ফলে নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এডিআর যেন বেড়ে না যায়, এ জন্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলোও সতর্কতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো আগের মতো আর ঋণ বাড়াতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ব্যাংক খাতে মোট আমানত প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকা। বিপরীতে ঋণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকা। তবে ব্যাংক খাতের জন্য বড় উদ্বেগ হচ্ছে খেলাপি ঋণ। বর্তমানে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা খেলাপি দাঁড়িয়েছে, যা মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের রক্তক্ষরণ সামাল দিতে গিয়ে ৯টি ব্যাংক ১৯ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছি আগেই। যার কাছে সম্ভাবনা ও স্বপ্ন আছে, বেসরকারি খাতের জন্য যার দরজা সব সময় খোলা তাকে চেয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে আরো বেশি গতি তৈরি হবে। বিনিয়োগ প্রাণ পাবে। ব্যাংক খাতের জন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে একটি নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সবকিছু ঠিক করে নেব। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ চাঙ্গা হবে। আশা করি, সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে আমাদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই