পুঁজি লাগে না ইয়াবা চালানে

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯, ০৫:৪১ পিএম

ঢাকা : জঙ্গিদের মতোই মাদক মাফিয়াদের নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক পরিসরে বিস্তৃত। তারাও জঙ্গিদের মতো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে হুন্ডির মাধ্যমে মাদকের টাকা লেনদেন করে থাকে। ফলে এদের দুর্গে হানা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে। কক্সবাজারে এ রকম কমপক্ষে ১০ সিন্ডিকেটের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সেখানে বসে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবার চালান লোক মারফত গ্রহণ করে সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে মিয়ানমারে অর্ধশত ইয়াবা কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোর অধিকাংশের মালিক মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সদস্য। এসব কারখানা থেকে কোনো টাকা ছাড়াই বাংলাদেশি মাদক মাফিয়াদের কাছে পাঠানো হয়। গন্তব্যে পৌঁছার আগে সেই চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়লে সেটার কোনো মূল্য দিতে হয় না। সফলভাবে পৌঁছালে সেই চালানের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে অবস্থিত নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

এ ধরনের মাদক মাফিয়াদের কমপক্ষে ১০টি সিন্ডিকেটের তথ্য এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতের মুঠোয়। মাদক মাফিয়াদের চিহ্নিত করে তাদের দুর্গে হানা দিতে পারলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে আসা অনেকটা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, মাদক নির্মূল করা কঠিন কাজ। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কারণ ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ-যুবক ঝুঁকছে এ মরণনেশায়।

সুতরাং ইয়াবার বিস্তার রোধ করতে হলে মাদকিরোধী অভিযান ও আত্মসমর্পণের পাশাপাশি এর কুফল সম্পর্কে আরো ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ইয়াবার ক্ষতিকর দিক, কুফল ও সর্বশেষ পরিণতি সম্পর্কে প্রচার করতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। এক কথায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া সমাজ থেকে ইয়াবার মূলোৎপাটন করা কঠিন হবে।

এ ব্যাপারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মেজর রইসুল ইসলাম বলেন, অ্যাকচুয়ালি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবজেক্ট এটা। যেহেতু এ মরণনেশা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তাদের পাশাপাশি আমরাও কাজ করছি। এটা আমাদের দায়িত্বের অংশ। তিনি বলেন, কক্সবাজারে র‍্যাব ‘ইফেক্টিভলি’ কাজ করছে। ফলে ইয়াবার প্রকোপ কিছুটা হলেও কমে এসেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এখন আমাদের টার্গেট হচ্ছে গডফাদার ও মাদক মাফিয়াদের দিকে। যারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান নিয়ে দিব্যি মাদকের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে।

অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, অভিযান আত্মসমর্পণ এত কিছুর পরও কেন ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হচ্ছে না। সে বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে তদন্তে অনেকটা অগ্রগতিও আছে। হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়টিও এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার। আমরা ‘অলমোস্ট অ্যাকশন প্ল্যান’ করেছি। ইয়াবার চালান আসা রোধে পুলিশ র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। মাদক মাফিয়ারা যত বড়ই শক্তিশালী এবং যে দলেরই হোক না কেন তাদের কোনো ছাড় নেই।

তিনি বলেন, সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেউ মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ক্ষমতাসীন দলের বড় কোনো নেতা মাদকে যুক্ত কারো পক্ষে তদবির করলে সেটাও উনাকে জানাতে বলেছেন। সুতরাং মাদকে যুক্ত বা তদবিরকারী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার রাইট আমাদের আছে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সদস্যদের নামে বেনামে পরিচালিত সীমান্ত ঘেঁষে গড়ে ওঠা কারখানাগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে বাংলাদেশ থেকে একটি টাস্কফোর্স ওই দেশে যাওয়ার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করার কথা রয়েছে। টাস্কফোর্সের কাজ হবে ওই দেশে গিয়ে সরাসরি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলা।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিরা যেভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে টাকা পাচার করে এনে থাকে। একইভাবে মাদক মিয়ানমার থেকে পৌঁছায় এক স্থানে। আরেক স্থান থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে কাজ চলছে। এরাও গ্রেফতার হবে, সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

সোনালীনিউজ/এমটিআই