ছয়পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ

রমজান মাসে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এবার কঠোর সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০১৯, ০৩:২৫ পিএম

ঢাকা: মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এবার রোজা শুরু হবে। সে হিসাবে আর দু’মাস পর আসছে মাহে রমজান। এবার রমজান মাসে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে একটু আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে রমজান মাস সামনে রেখে ছয়পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এদিকে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর কৌশল নেয়া হলে অপরাধী ব্যবসায়ীকে এবার পেতে হবে কঠোর শাস্তি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখায় করণীয় ঠিক করতে এ মাসেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

চাহিদার তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অনেক বেশি মজুদ থাকায় রমজান মাসে পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে- এমন কথা কয়েক বছর ধরে বলে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক থাকে না। অধিক মূল্য দিয়েই ক্রেতাদের পণ্য কিনতে নাভিশ্বাস ওঠে।

রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি পণ্য হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। রমজানে যাতে এ ধরনের পণ্যসামগ্রীর কোনো সঙ্কট তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নিয়মিত বাজার তদারকি করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, রমজান উপলক্ষে অন্যান্য বারের মতো এবারও আমাদের মজুদ পরিস্থিতি খুব ভালো। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া এবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ভোক্তাদের জন্য এ সুখবর দিয়ে আরও বলা হয়, রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকবে। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা ও জোগান বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

ভোজ্যতেল : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সয়াবিন ও পাম অয়েলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা প্রায় আড়াই লাখ টন। এর মধ্যে দেশে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হয়। ঘাটতি পূরণে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) আট লাখ ৬৪ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েক টন ভোজ্যতেল আমদানি পাইপ লাইনে রয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ভোজ্যতেল মজুদ রয়েছে।

পেঁয়াজ : দেশে প্রায় ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ ৭০ হাজার টন চাহিদা থাকলেও শুধু রোজার মাসে চাহিদা দাঁড়ায় তিন লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত লাখ ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। তাই চাহিদার তুলনায় এ মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজ অনেক বেশি রয়েছে। তাই সরবরাহ ব্যবস্থা যথেষ্ট স্বাভাবিক ও দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। রমজানেও দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

চিনি : দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন চিনির বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। রোজার মাসে তিন লাখ টন চাহিদা দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশে প্রায় ৬৫ হাজার ৫৬২ টন চিনির উৎপাদন হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চিনি আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হয়।

এনবিআরের তথ্য মতে, ঘাটতি পূরণে ব্যবসায়ীরা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ২৫ লাখ টন চিনি আমদানি করে। সে হিসাবে গত অর্থবছরে আমদানি করা চিনির মজুদ রয়েছে নয় লাখ টন। এছাড়া চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) সাড়ে আট লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি চিনির মজুদ রয়েছে।

ডাল : দেশে প্রায় চার লাখ টন ডালের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসে চাহিদা দাঁড়ায় ৬০ টন। এর মধ্যে দেশে ১০ লাখ টন সব ধরনের ডালের উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রায় সাত লাখ টন ডাল (মশুর ও মুগ ডাল) আমদানি করেছে। সুতরাং এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ডালের মজুদ রয়েছে।

ছোলা : অভ্যন্তরীণ মার্কেটে বার্ষিক ছোলার চাহিদা রয়েছে এক লাখ টন। রমজান মাসে চাহিদা দাঁড়ায় ৮০ হাজার টন। এর মধ্যে সাত হাজার টন দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাকিটা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।

এনবিআরের তথ্য মতে, ঘাটতি পূরণে ব্যবসায়ীরা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রায় দুই লাখ টন ছোলা আমদানি করেছে। সুতরাং এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ছোলার মজুদ রয়েছে।

খেজুর : দেশে বার্ষিক প্রায় ২০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার টন। এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম আট মাসে প্রায় ৪০ হাজার টন খেজুর দেশে আমদানি হয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ খেজুর মজুদ রয়েছে। ফলে খেজুরের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। তাই রমজানেও খেজুরের দাম বাড়বে না বলে দাবি করা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে।

এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, চাল, গম, আদা ও রসুনের মজুদ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে এসব পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। রমজানেও দাম বাড়বে না বলে দাবি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন