পুলিশের দুর্বল তদন্তে রেহাই পাচ্ছে বোমাবাজির আসামি

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০১৬, ১১:৫০ এএম

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

বিস্ফোরক ও বোমাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিরা দুর্বল ও গোঁজামিল তদন্তে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। খোদ রাজধানীতেই দুর্বল তদন্তে শতাধিক বিস্ফোরক ও বোমাবাজি মামলার আসামির অধিকাংশই আদালতের নির্দেশে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে। আর আরো রেহাই পাওয়ার অপেক্ষায় আছে অর্ধশত বোমাবাজ মামলার অভিযোগের আসামিরা।

ওসব মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ─বিস্ফোরক ও বোমাসহ গ্রেফতার আসামিদের পরিত্রাণ পাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ। ফলে হাতেনাতে গ্রেফতার অনেক বোমাবাজের বিরুদ্ধেই মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না। এ সুযোগে দুর্ধর্ষ অনেক আসামি বিচারের আগেই মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাচ্ছে।

তবে আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে─আসামিদের অব্যাহতি পাওয়া বা না পাওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কারণ আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরেও পুলিশ যদি অব্যাহতি চায় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনঃ তদন্তে পাঠানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে পারে। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বিস্ফোরক ও পেট্রলবোমাসহ রাজধানীর মিরপুর থানা এলাকার একটি মেস থেকে হাতেনাতে ১২ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়। কিন্তু ওই মামলায় পুলিশ গোঁজামিল দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করায় বিচারের আগেই বোমাসহ গ্রেফতার হওয়া পাঁচ আসামি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যায়। মামলার অভিযোগে বলা হয়- মিরপুর মডেল থানার সেকশন-২, ব্লক বি, রোড-২, বাসা নম্বর-১, দ্বিতীয় তলার মেস থেকে ১২ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ওই সময় আসামিদের কাছ থেকে মজুদ করা বোতলভর্তি পেট্রল, পেট্রলবোমা, গান পাউডার, ককটেলসহ বিভিন্ন প্রকার জিহাদি বইসহ ১৭টি আলামত উদ্ধার করা হয়। পরে ওসব আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক পরিদফতরের কাছে মতামত চাওয়া হয়। 

বিস্ফোরক পরিদফতরের আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাসায়নিক পরীক্ষায় শনাক্তকৃত পেট্রল একটি অতি প্রজ্বলনীয় তরল পদার্থ। যা বোমা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর নাইট্রো সেলুলোজ একটি বিস্ফোরক। যা দেশীয় ককটেল জাতীয় বিস্ফোরক তৈরির অন্যতম উপাদান ও পেট্রলবোমার শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে থাকে।

কিন্তু ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতবছরের ১৪ এপ্রিল বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে গোঁজামিল দিয়ে আদালতে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দুটিতে বোমাসহ হাতেনাতে গ্রেফতারকৃত ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়।

পরবর্তীতে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দাখিল করা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেন। বিচারের আগেই ওই মামলার ৫ আসামি মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে মুক্ত হয়ে যায়। তবে একই ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের অপর মামলায় ওই আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৪ মে দিন ধার্য করেছেন একই আদালত।

সূত্র জানায়, বিস্ফোরক ও বোমাবাজদের মামলার তদন্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ গোঁজামিল দিয়ে আদালতে দুর্বল অভিযোগপত্র দাখিল করে। সেক্ষেত্রে অনেক মামলায় আসামির নাম, ঠিকানা ও বিবরণ সংক্ষিপ্ত কওে দেখানো হয়। অনেক সময় অব্যাহতি দেয়ার জন্য আসামির ঠিকানা ইচ্ছা করে এদিক-ওদিক করে অভিযোগপত্রে দেখানো হয়। আর বলা হয়─আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং নাম-ঠিকানা সঠিক নয়।

তাই আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হোক। কিন্তু ওই আসামিদের গ্রেফতারের সময় মামলার জব্দ তালিকায় বোমা অথবা পেট্রলবোমা অথবা বোমা তৈরির কাঁচামাল ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাছাড়া রিমান্ড আবেদনে বলা হয়─আসামিদের কাছ থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। তাই বোমার উৎস এবং ঘটনার সাথে অন্য যারা জড়িত তাদেও গ্রেফতার করতে ওই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। 

পরে রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু শেষপর্যায়ে ওই তদন্ত কর্মকর্তাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের সময় বলেন- আসামির নাম-ঠিকানা সঠিক নেই এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হোক।  এ অবস্থায় তাহলে আদালতের বিচারক পুলিশ কর্মকর্তার কোন কথাটি বিশ্বাস করবেন। আর এই সুযোগে মামলার অভিযোগ থেকে সহজেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছে আসামিরা।

এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু  জানান, শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার অভিযোগের কথা গুরুত্বসহকারে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি হাতেনাতে বোমাসহ গ্রেফতারকৃত দুর্ধর্ষ আসামিদের যদি পুলিশ অব্যাহতির জন্য আবেদন করে তবে রাষ্ট্রপক্ষ রথকে মামলাটি পুনঃতদন্তে পাঠানোর জন্য আদালতকে জানানো হয়। তবে আসামিদের অব্যাহতি দেয়া বা না দেয়ার বিষয়টি বিচারকের বিবেচনামূলক এখতিয়ার।

অন্যদিকে পুলিশের দুর্বল ও গোঁজামিল তদন্ত প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এই বিষয়ে আইজি ভালো বলতে পারবেন। আমার কাছে সব বিষয়ে তথ্য থাকে না।

সোনালীনিউজ/আমা