এবার বদলে যাবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০১৯, ০৬:৪৯ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যাদের ধারনা আছে, তারা এক নামেই চিনবেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে খেলেছেন লিওনেল মেসি ও জিনেদিন জিদানের মতো তারকা ফুটবলার। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটের মিনি বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ হকি, বক্সার মুহম্মদ আলীর প্রদর্শনী ম্যাচসহ বিভিন্ন ইভেন্টে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে এই মাঠে। কিন্তু ১৯৫৪ সালে তৈরি এই স্টেডিয়ামটি দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সুখবর হলো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম এই স্থাপনাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (২৫ জুন) স্টেডিয়ামটি সংস্কারের জন্য ৯৮ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বিশাল অঙ্কের এই অর্থ ব্যয়ে এবার বদলে যাবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। ২০২২ সালের মাঝামাঝি নতুন রূপে দাঁড়াবে ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়াম।

বিশাল এই অর্থ ব্যয় হবে স্টেয়িামের মাঠ উন্নয়ন, গ্যালারিতে শেড নির্মাণ, গ্যালারিতে চেয়ার স্থাপন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম আধুনিকায়ন, ফ্লাডলাইট স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন, এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো, নতুন অ্যাথলেটিক ট্র্যাক স্থাপন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন, মিডিয়া সেন্টার তৈরি, টিকেট কাউন্টার, ডোপ টেস্ট রুম তৈরি, চিকিৎসা কক্ষ, ভিআইপি বক্স নির্মাণ, প্রেসিডেন্ট বক্স, টয়লেট উন্নয়ন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সাব-স্টেশন সরঞ্জাম, এসি ও সৌর প্যানেল সরবরাহ- এই কাজগুলো থাকছে স্টেডিয়াম সংস্কারে।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী জাতীয় এই স্টেডিয়ামটি। স্বাধীনতার আগে নির্মিত হয়, ১৯৫৪ সালে। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই স্টেডিয়ামটিকে ভিন্নরূপে দেখে বিশ্ববাসী। তবে ওটাই শেষ। এরপর অযত্ন আর অবহেলায় দিনকে দিন শুধু মলিনই হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি।

মূলত ফুটবলের জন্য ব্যবহৃত হলেও এখানে আয়োজিত হয় অ্যাথলেটিক্স, আরচারি, সাইক্লিংসহ আরও বেশকিছু খেলা। এছাড়াও বিশেষ দিবসে বিভিন্ন আয়োজনে হয়ে থাকে এই স্টেডিয়ামটিতে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে স্থাপনাটির অনেক জায়গা এখন রুগ্ন অবস্থা। তবে এবার দৃষ্টি দিয়েছে ক্রীড়া পরিষদ। কিছুটা অবাক হলেও সত্যি ছাউনি দিতে যাচ্ছে গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে।

নির্দিষ্ট কোনো টুর্নামেন্ট উপলক্ষ্যে এবার সংস্কার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বহুমাত্রিক ব্যবহৃত জাতীয় স্টেডিয়ামের বর্তমান অবস্থা সন্তোষজনক নয়। এখানে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক ছাড়াও হয়ে থাকে জাতীয় পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে দেশের খেলারধুলার প্রধান বলয়। গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকার এবার বড় ধরনের সংস্কার করতে যাচ্ছে জাতির জনকের নামের এই স্টেডিয়ামটি।

২০১৭ সালে যখন স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, তখন বাজেট ছিল ৮০ কোটি টাকার মতো। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সংস্কার শেষ করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল ডিপিপি। কিন্তু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্টেডিয়াম সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। নতুন করে ডিপিপি তৈরি করার পর গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি)।

এই প্রকল্প সম্পন্ন হবে তিন অর্থ বছরে। ২০১৯-২০, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ - এই তিন বছরে ভাগ করা হয়েছে কাজ। সবচেয়ে বেশি টাকার কাজ হবে দ্বিতীয় অর্থ বছরে। পরিমাণ ৫৭ কোটি টাকার মতো। প্রথম বছরে ২৬ ও শেষ বছরে ১৫ কোটি টাকার মতো। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বছর ভিত্তিক যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাতে পরিবর্তন আসতে পারে কাজের সুবিধার্থে।

গ্যালারি ও ভিআইপিতে বসানো হবে উন্নতমানের নতুন চেয়ার। এর মধ্যে ভিআইপি গ্যালারিতে বসানো হবে ফোল্ডিং চেয়ার। বদলে ফেলা হবে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। তবে ফ্লাডলাইটের টাওয়ার অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু বদলে ফেলা হবে বাতি। প্রথমে এলইডি বাতি লাগানোর পরিকল্পনা ছিল। নতুন পরিকল্পনায় স্থাপন করা হবে জি-থ্রি ভারসনের বাল্ব। এর মাধ্যমে আলো ও সৌন্দর্য দুটিই বাড়বে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন দেয়ার পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, ‘প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এটা দেশের খেলাধুলার জন্য অনেক ভালো একটা খবর। এখন আমরা বসে কীভাবে কাজগুলো করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের হাতে তিন বছর সময় আছে। যে কাজগুলো করলে খেলাধুলায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না সেগুলো এখন করা হবে। যেমন গ্যলারিতে চেয়ার স্থাপন, ফ্লাড লাইট স্থাপন, ডিজিটাল জায়ান্ট স্ক্রিন তৈরি, মিডিয়া সেন্টার- এমন অনেক কাজ। মাঠ সংস্কার, অ্যাথলেটিক ট্র্যাক স্থাপন ও গ্যালারিতে শেড বসানোর কাজ হয়তো প্রথম দিকে ধরতে পারবো না।’

একনেকের অনুমোদনের চিঠিটি প্রথমে পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। তারা একটি চিঠি দেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। আর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অর্ডার পেলেই দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আনুষ্ঠানিক কাজগুলো শেষ করে দরপত্র আহ্বান কারতে ৩-৪ মাস লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই