ইউসুফ-মোসাদ্দেকের ব্যাটে আবাহনীর জয়

  • স্পোর্টস রিপোর্টার | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১, ২০১৬, ০৮:৩১ পিএম

সহজেই প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বাধা পার হয়েছে আবাহনী। দলকে জেতাতে বিকেএসপিতে ঝড় তুলেছিলেন ইউসুফ পাঠান। মাঝের ছোট ধসে তবুও চাপে পড়েছিল তামিম ইকবালের দল। তবে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক হোসেন। বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাট নেমে ৯ উইকেটে ২৪০ রান করে প্রাইম ব্যাংক। শিরোপাধারীদের সব উইকেটই নেন আবাহনীর স্পিনাররা। ৩৩ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জিতে যায় তারা।

মেহেদি মারুফ ও শানাজ আহমেদের ব্যাটে ভালো সূচনা পাওয়া প্রাইম ব্যাংককে কাঁপিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গে ছিল সাকলাইন সজীবের যোগ্য সহায়তা।  বিনা উইকেটে ৩৫ থেকে প্রাইম ব্যাংকের স্কোর হয় ৪ উইকেটে ৭৯। সাকিবের বলে বিভ্রান্ত হয়ে ততক্ষণে সাজঘরে মারুফ (২৬), সাব্বির রহমান ও উন্মুখ চাঁদ। আইকন খেলোয়াড় সাব্বির ফিরেন শূন্য রানে। একটু থেমে আসা উইকেটে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন তিনি। ভারতীয় ব্যাটসম্যান চাঁদ পড়েন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। ৫ ওভার শেষে সাকিবের বোলিং ফিগার ছিল ৫-১-৮-৩। নুরুল হাসান-তাইবুর রহমান-শুভাগত হোম চৌধুরী প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন ঠিকই। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়ে ফিরে যাওয়ায় দল শেষ পর্যন্ত আড়াইশ’ ছুঁতে পারেনি। প্রাইম ব্যাংকের ইনিংসে একটাই অর্ধশত রানের জুটি। তাইবুরের (৪৩) সঙ্গে ৫০ রানে সেই জুটিতে সঙ্গী ছিলেন অধিনায়ক শুভাগত। এর আগেই ফিরে যান সর্বোচ্চ ৪৬ রান করা নুরুল।  

শেষের দিকে ১৯ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংসে দলের সংগ্রহ আড়াইশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান মনির হোসেন। ৩৫ রানে চার উইকেট নিয়ে আবাহনীর সেরা বোলার সাকিব। আরেক বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইন তিন উইকেট নেন ৩৭ রানে। চোটের জন্য খেলেননি আবাহনীর তাসকিন আহমেদ। আগের দিন অনুশীলনে ফুটবল খেলার সময় কুঁচকি চোট পাওয়ায় খেলতে পারেননি প্রাইম ব্যাংকের সেরা বোলার রুবেল হোসেন। ম্যাচে তার অভাব খুব অনুভব করেছেন অধিনায়ক শুভাগত। লক্ষ্য তাড়ায় আবাহনীকে শুরুতে পথ দেখান অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শুভাগতর বলে নাজমুল ইসলামের তালুবন্দি হয়ে শেষ হয় তার ৪৬ বলে ৪০ রানের ইনিংস। ৫৬ রানে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পরও আবাহনীকে চেপে ধরতে দেননি ইউসুফ পাঠান।

আইপিএলের ছন্দ প্রিমিয়ার লিগেও নিয়ে এসেছেন ভারতের এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে কাভার দিয়ে চার হাঁকিয়ে দারুণ শুরু করেন ইউসুফ। এক বল আবার শুভাগতর বল সুইপ করে অনায়াসে মাঠের বাইরে পাঠান তিনি। পুরো ইনিংসেই এই ছন্দে খেলে গেছেন তিনি। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ইউসুফ যখন ব্যাট করছিলেন তখন আবাহনীর জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। তৃতীয় উইকেটে তাদের ৯৪ রানের জুটিতে আবাহনী তখন দাঁড়িয়ে ২ উইকেটে ১৫০ রানের খুব ভালো অবস্থানে।

শুভাগতর বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নাজমুলের (৩২) বিদায়ে ছন্দ পতন ঘটে আবাহনীর ইনিংসে। ৬ রানের মধ্যে ফিরে যান ইউসুফ ও সাকিবও। ইউসুফের ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার, ছিল দুটি ছক্কা। একটি ছক্কায় আবার বল উড়ে গিয়ে পড়ে বিকেএসপির দেওয়ার বাইরে। তবে ২২তম ওভারে রায়হান উদ্দিনের বলে দুইবার জীবন পান ইউসুফ। স্কয়ার লেগে সহজ একটি ক্যাচ ছেড়ে দলকে হতাশায় ডোবান দলের সেরা ফিল্ডার সাব্বির। দুই বল আবার দুরূহ ক্যাচ ফস্কায় তার হাত থেকে। এবার বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েও বল তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি।
১৫৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ চাপে আবাহনী। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ ব্যাটিং করে চলা মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে ক্রিজে তখন যোগ দেন লিটন দাস। রানের জন্য সংগ্রাম করা এই ব্যাটসম্যান টপ অর্ডার থেকে নেমে আসেন সাতে! মোসাদ্দেক-লিটনের পরিণত ব্যাটিংয়ে সহজ পেতে কোনো সমস্যা হয়নি আবাহনীর। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে এই দুই জন গড়েন ৮৭ রানের জুটি। পরপর দুটি ছক্কায় আবাহনীকে জয় এনে দেন মোসাদ্দেক। সব মিলিয়ে চারটি করে ছক্কা-চারে ৪৯ বলে অপরাজিত থাকেন ৬৪ রানে। চমৎকার ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই। প্রান্ত বদল করে খেলা লিটন অপরাজিত থাকেন ২১ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ২৪০/৯ (মারুফ ২৬, শানাজ ২৪, সাব্বির ০, উন্মুখ ২, নুরুল ৪৬, তাইবুর ৪৩, শুভাগত ২৯, রায়হান ৯, নাজমুল ১৫, মনির ২৫*, আজিম ১*; সাকিব ৪/৩৫, সাকলাইন ৩/৩৭, নাজমুল ১/৩১, মোসাদ্দেক ১/৪৮)

আবাহনী: ৪৪.৩ ওভারে ২৪৩/৫ (তামিম ৪০, অভিষেক ১২, নাজমুল ৩২, ইউসুফ ৬০, সাকিব ৩, মোসাদ্দেক ৬৪*, লিটন ২১*; শুভাগত ৩/৩৮, নাজমুল ২/৫১)

ফল: আবাহনী ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই