পাঁচবার গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী শারাপোভার লাইফস্টাইল

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২, ০৩:৪৫ পিএম

ঢাকা: ৩৪ বছর বয়সী মারিয়া শারাপোভার জন্ম রাশিয়ার নিয়ান শহরে। মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই চেরনোবিল নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনার শিকার হয় রাশিয়া। ‘ব্লাস্ট রেঞ্জে’র মধ্যে বাড়ি থাকায় স্ত্রীকে নিয়ে নিজেদের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে যান ইউরি শারাপোভ।

মাত্র ছয় বছর বয়সে প্রথম টেনিস তারকা মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার নজরে পড়েন মারিয়া। মারিয়াকে ফ্লোরিডা নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন নাভ্রাতিলোভা। সেখানের টেনিস একাডেমিতে ভর্তি করতে পারলে তার প্রতিভার সঠিক বিকাশ হবে।

সেই পরামর্শ মতো টাকাপয়সা ধার করে রাশিয়া থেকে মেয়েকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন বাবা ইউরি শারাপোভ। মাত্র ৭০০ ডলার নিয়ে আমেরিকায় পা রাখেন ইউরি আর মারিয়া। লক্ষ্য, মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করা। ৯ বছর বয়সে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে টেনিস একাডেমিতে ভর্তি হন শারাপোভা।

২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন শারাপোভা। টেনিসের মুন্সিয়ানার সঙ্গে গ্ল্যামার দিয়ে দ্রুতই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে যান তিনি। এরপর একে একে জিতেছেন ৫টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ও ৩৫টি শিরোপা। ২০০১ সাল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসে খেলা এই তারকা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (২০০৮), উইম্বলডন (২০০৪) ও ইউএস ওপেন (২০০৬) ছাড়াও জিতেছেন দুটি ফ্রেঞ্চ ওপেন (২০১২ ও ২০১৪)।

সাফল্যের সঙ্গে তার পাশে হেঁটেছে বিতর্কও। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এরপর ফিরে এলেও চোট সঙ্গী হয় তার। সেই চোটের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন তিনি। ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় র্যাঙ্কিংয়ে ৩৭৩ নম্বরে নেমে গিয়েছিলেন তিনি। জোর করে খেলা না চালিয়ে তাই বললেন, ‘বিদায়।’

২০১৮ সালে টেনিসে ফিরে ২০২০ সালে পাকাপাকিভাবে অবসর নেন তিনি। ২০১২ সালে টেনিস খেলোয়াড় গ্রিগর দিমিত্রভের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মারিয়া শারাপোভা। তাদের সম্পর্ক টিকেছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত।

২০১৮ সালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী অ্যালেকজেন্ডার জিলকেসের সঙ্গে মন বিনিময় করেন। ২০২০ সালে বাগদান শেষে এখন সুখী জীবন যাপন করছেন তিনি।

২০০৫ থেকে ২০১১, টানা ছয় বছর ‘ফোর্বস সেলিব্রেটি ১০০’ লিস্টে জায়গা করে নিয়েছিলেন শারাপোভা। মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম নাইকির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন সাবেক এই টেনিস তারকা। ২০১০ সালে নাইকির সঙ্গে নতুন চুক্তিতে ‘নাইকি-শারাপোভা কালেকশন’ নামে পোশাক ব্র্যান্ড তৈরি করেন।

২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনী ‘মাই লাইফ সো ফার’। ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে আছেন তিনি। চেরনোবিল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজে সাহায্য করে মারিয়া শারাপোভা ফাউন্ডেশন।

তার গাড়ির সমাহারও ঈর্ষণীয়। তার গ্যারেজে শোভা পায় মার্সিডিজ বেঞ্জ, রেঞ্জ রোভার, অডি, পোরশেসহ দামি ব্র্যান্ডের সমাহার। শারাপোভার মোট সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি খামারবাড়ি কেনেন শারাপোভা। ৫ একরের এই খামারে আছে বোলিং অ্যালি, সুইমিং পুল আর দামি সব চিত্রকর্ম। ৬ ফুট ১ ইঞ্চির মারিয়া শারাপোভা টেনিস খেলে আয় করেছেন ৪ কোটি ডলার বা ৩৪৪ কোটি টাকা। 

পেশাদার টেনিস থেকে অবসর নিলেও এখনো প্রতিবছর ১৫ কোটি টাকা আয় করেন মডেলিং ও ব্যবসা থেকে, সময় সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান এই টেনিস তারকা ও মডেল।

‘সুগারপোভা’ নামে ক্যান্ডি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী তিনি। ২০১৩ সালে চালু করা এই ব্র্যান্ডের লভ্যাংশের পুরোটাই যায় ‘মারিয়া শারাপোভা ফাউন্ডেশন’ চ্যারিটিতে। এ ছাড়া সানস্ক্রিন ব্র্যান্ড ‘সুপারগুপ’-এর ১০ শতাংশের অংশীদার তিনি।

সবমিলিয়ে অবসর জীবনও বেশ খোশ মেজাজেই কাটছে তার। সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকার পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গেও সুখী জীবন উপভোগ করছেন বিশ্ব টেনিসের অন্যতম সেরা সুন্দরী তারকা।

সোনালীনিউজ/এআর