টেস্টে ভালো করার পূর্ণ পরিকল্পনা জানালেন সাকিব

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২, ১১:৫৮ এএম
ফাইল ছবি

ঢাকা : সেন্ট লুসিয়া টেস্ট ১০ উইকেটে হারের পর অধিনায়ক সাকিব খোলামেলা কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখনো টেস্টের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আপাতত দেড় বছরের পরিকল্পনায় সবাইকে নিয়ে বসতে চান সাকিব। যেখানে ঘরের মাঠে জয়কে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা তার। 

কেননা বাংলাদেশ দল বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজেদের অবস্থান বেশ শক্ত করেছে। সাদা বলের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতেও নেহায়েত মন্দ নয় টাইগারদের সাফল্য। তবে সাদা পোশাক গায়ে চাপালেই মলিন হয়ে যায় সব। ঠিকঠাক খুঁজে পাওয়া যায় না কাউকে। টেস্টে সাফল্যের খোঁজে নেমে সম্প্রতি অধিনায়কত্বেও এসেছে পরিবর্তন। মুমিনুল হকের জায়গা নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

নেতৃত্ব থেকে কম্বিনেশন- সবখানে পরিবর্তন এনেও ফলাফলে পরিবর্তন আনা যাচ্ছে না। দিন শেষে পরাজিত দলের নাম হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ! কখনো ব্যাটিং, কখনো ফিল্ডিং, কখনো বোলিং, কখনো বা তিন বিভাগের ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হচ্ছে অধিনায়ককে। শেষ কয়েক বছরে টেস্ট সিরিজ শেষের পর এটি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যত্যয় হয়নি উইন্ডিজ সিরিজেও। দুই ম্যাচ সিরিজে হার ০-২ ব্যবধানে।

টেস্টে ভালো করার জন্য সাকিবের পূর্ণ পরিকল্পনা তার ভাষাতেই তুলে ধরা হলো: 

টেস্ট সংস্কৃতিকে দুষছেন সাকিব : ক্রিকেটারদের উপরেই যে দোষটা শুধু দিবেন তা নয়, আমাদের দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিটাই এমন। আপনি কবে দেখেছেন ২৫-৩০ হাজার দর্শক (স্টেডিয়ামে) টেস্ট ম্যাচ দেখেছে? ইংল্যান্ডের তো প্রত্যেক ম্যাচে দেখে। টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতিটা আমাদের দেশে আগেও কখনো ছিল না, এখনো নেই। নেই বলে যে হবে না এমনটা না, ওই জিনিসটা পরিবর্তন করা আমাদের বড় দায়িত্ব। সেটার জন্য একসাথে পরিকল্পনা করে যদি আগানো যায় আমার মনে হয় তাহলে সম্ভব হবে। তা না হলে আগানো সম্ভব হবে না। যেটা বললাম যে, টেস্টের সংস্কৃতিটাই তো নাই। টেস্ট ক্রিকেটকে আমরা যে খুব বেশি আসলে মূল্যায়ন করি সেটা আমি বলবো না।

একটা কারণ হতে পারে যে আমাদের রেজাল্ট ভালো না এজন্য মূল্যায়ন হয় না। একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক আছে। ওই থেকে থেকে আমি বললাম যে দেশে যেন আমরা ভালো খেলি টেস্ট ম্যাচ ধারাবাহিকভাবে। আপনাকে আগে ঘরে ভালো খেলা নিশ্চিত করতে হবে, তখন আপনি যখন দুইটা অ্যাওয়ে সিরিজ খেলে একটাতে খারাপ করবেন সেটা আসলে চোখে ধরবে না। তো এই কারণে আসলে আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা ঘরের মাঠে ভালো খেলি।

আগে ঘরের মাঠে জিততে চান সাকিব : আমাদের বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে, তার আগে আমাদের নিজেদের চিন্তাগত পরিবর্তন আনাটাও খুব জরুরী। সেই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করার আছে। যেহেতু এখনো হাতে ৫ মাসের মতো (পরবর্তী টেস্ট সিরিজ) সময় আছে, তো সবাই বসে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গুলো দেয়া যাবে বলে আমি মনে করি। এতো আগে প্ল্যান করে সফল হওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।

সবাই মিলে বসে চিন্তা ভাবনা করে আমরা যদি আগাই, তো আমার ধারনা এক-দেড় বছর সময় পেলে ভালো রেজাল্ট নিয়মিত করা সম্ভব। আমি বলব না যে টেস্ট ম্যাচ জিততেই হবে কারণ, যখন কোন দেশ অ্যাওয়ে ট্যুরগুলো করে সবাই আন্ডারডগ থাকে। এখন নিউজিল্যান্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওরাও যখন বাইরে সিরিজগুলো খেলতে আসে হেরে যায়। ইংল্যান্ডে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসছে হেরে যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া যখন অন্য দেশে যাচ্ছে হেরে যাচ্ছে। ভারত যখন অন্য দেশে যায় তখন তারাও, আবার ভারতে যখন কেউ আসে তারাও হেরে যায়।

একটা জিনিস নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যেন ঘরের মাঠে না হারি। হয় আমরাও ড্র করব না হলে জিতব। এই উন্নতিটা যদি হয়, আমাদের হয়তো অনেক দূরে নিয়ে যাবে বাইরের পারফরম্যান্স গুলো। নাও যেতে পারি কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটটা খেলব, এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। সেজন্য আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ যে দেশের সিরিজগুলোতে খুব ভালো করে খেলি, আমরা নিশ্চিত করি। হারবো না বলাটা নেতিবাচক শোনায় কিন্তু, আমরা যেন জিতি, না জিতলেই সিরিজটা যেন ড্র ছাড়া অন্য কোনো ফলাফল না হয়।

সর্বোপরি উন্নতিতে চোখ সাকিবের : দেখুন উন্নতি আসলে সব বিভাগেরই করতে হবে। আমরা যদি টেস্ট ম্যাচ জিততে চাই সব বিভাগে উন্নতি করতে হবে। একটা দিক ভালো যে অনেক বড় একটা গ্যাপ আছে। এই গ্যাপগুলোতে যারা টেস্টের জন্য খেলতে আগ্রহী বা টেস্ট খেলতে চায়, তারা হয়তো যার যার জায়গা থেকে উন্নতিগুলো করার চেষ্টা করবে। আরয়ান, উন্নতি ছাড়া আর ভালো কিছু নাই আমাদের করার। এবং এমন কোনো সেটআপ ক্রিকেটারও নাই যে তাদের আনলে তারা ভালো করে ফেলবে। যারা আছি আর বাইরে হয়তো দুই-চারজন আছে সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করে আগালে হয়তো ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। তা না হলে এতদিন ধরে যা কিছু হয়ে আসছে, তা থেকে খুব ভালো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

আমাদের বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে, তার আগে আমাদের নিজেদের চিন্তাগত পরিবর্তন আনাটাও খুব জরুরী। সেই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করার আছে। যেহেতু এখনো হাতে ৫ মাসের মত সময় আছে, তো সবাই বসে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গুলো দেয়া যাবে বলে আমি মনে করি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ