শক্তিশালী ঘরোয়া ক্রিকেটের দাবি মুশফিকের

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০১৬, ১০:৫১ এএম

লংগার ভার্সন ক্রিকেট অর্থাৎ প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট, যা বাংলাদেশ বরাবরই পিকনিকের আদলেই হয়ে আসছে। অথচ টেস্ট খেলার যোগ্যতা মূল চাবিকাঠিই হচ্ছে ঘরোয়া এই ক্রিকেট লিগ। কিন্তু বাংলাদেশের এই লিগে পেশাদ্বারিত্ব কোথায়। আড়াইশত বছরের পুরানো টেস্ট দলের সঙ্গে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও চট্টগ্রাম টেস্টটি গতকাল হাত ছাড়া হয়ে যায়। একটি সুন্দর স্বপ্নের সমাধি হয়ে যায় বাংলাদেশের। মুশফিকরা হেরে গেছেন ২২ রানে। বেন স্টোকসের মাত্র তিন বলেই স্বপ্ন ভঙ্গ। পঞ্চম দিনের সকালেই ১০ ওভার মোকাবেলা করতে পারলেই হতো, বাংলাদেশ পৌছে যেত জয়ের বন্দরে। নিছক অনভিজ্ঞতা হাত ছাড়া হয়ে গেছে এমন একটি জয়। যা জিতলে হতে পারতো টেস্ট ক্রিকেটের নতুন এক যাত্রা। জয়টি হতে পারত ঐতিহাসিক। এই জয় হয়ত ঘুরিয়ে দিত দেশের ক্রিকেটের গতিপথ। কিন্তু হলো না। আক্ষেপ আর আফসোস ঝরিয়ে পড়া ম্যাচ হয়ে থাকলো টাইগারদের। গতকাল ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক ম্যাচটিতে হতাশা না হওয়ার কথা বললেও তার চোখ মুখ জুড়ে ম্যাচ হারানোর ব্যাদনা। টলমল করছে দু’চোখ। আর একটু হলেই যেন গড়িয়ে পড়বে পানি। 

দলের এমন বিজয় ছুটে যাওয়ার জন্য তিনি দলের কাউকে দায়ী করছেন না। দুষলেন ঘরোয়া ক্রিকেটকে। ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট হচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট লিগ। চারদিনের এই টুর্নামেন্টটি এখনও ‘পিকনিক ক্রিকেট’ নামেই পরিচিত। টেস্ট প্রাপ্তির ১৬ বছরেও ঘরোয়া এই ক্রিকেটের কোনও কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি বিসিবি। শুধু তাই নয় বিশেষ প্রয়োজনে হুটহাট বন্ধ হয়ে যায় লংগার ভার্সনের এই টুর্নামেন্ট। কারণ হিসেবে দেখানো হয়-জাতীয় দলের ব্যস্ততা।

আবার কখনও নিয়মিত খেলা হলেও দেখা যায় উইকেট স্লো কিংবা ম্যাড়ম্যাড়ে। আর এমন উইকেট থেকে পেস বোলাররা কিছুই শিখতে পারে না বলে অভিমত মুশফিকের। অথচ চট্টগ্রামের স্লো-টার্নিং উইকেটেই ওকস-ব্রড-স্টোকসরা রিভার্সসুইং দিয়ে রীতিমতো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। শুধু নতুন বলে নয়, পুরনো বলে বিশেষ করে বেন স্টোকস ছিলেন হন্তারক। তাইতো মুশফিক আক্ষেপ করেই বললেন ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন অনভিজ্ঞতার কারণেই পেসাররা জানে না কীভাবে রিভার্স সুইং করতে হয়!

চট্টগ্রাম টেস্টে দুইজন পেসার খেলেছেন। দুই পেসার শফিউল ও কামরুল মিলে মোট ২৮ ওভার বোলিং করেছেন। সাফল্য বলতে একটি উইকেট! এমন পরিস্থিতিতে রুবেল কিংবা আল আমিনকে কতটুকু মিস করেছেন প্রশ্নটা করতেই মুশফিক জানালেন, ‘এভাবে বলা একটু কঠিন। ওদের টেস্ট রেকর্ডে যে আহামরি কিছু আছে তেমনটা নয়। এর মানে এই নয় যে, তারা খুব বাজে বোলার।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এমন উইকেটে খেলতে হলে বলটা কীভাবে রিভার্স করাতে হয় তা বোলারদের জানতে হয়। আমাদের সমস্যা আসলে শুরুতেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কয়জন বোলার আছে যারা পুরনো বলে বল করতে পারে। স্কোরকার্ড দেখলে দেখা যায়, ঘাসের উইকেটে হোক আর অন্য কোনও উইকেটেই হোক স্পিনাররা ৫ উইকেট নেয়, পেসাররা একটা বা দুইটা। এটা আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সব সময়ই হয়ে থাকে।’

বোলারদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন মুশফিক, ‘একজন বোলার যদি নাই বোঝে পুরনো বলে তাকে কীভাবে বোলিং করতে হবে, একটা ব্যাটসম্যানকে কীভাবে রেট করতে হবে। তাহলে বোলারদের কাছ থেকে টেস্ট ক্রিকেটে বড় কিছু আশা করা যায় না।’ ইংল্যান্ডের বোলারদের প্রসঙ্গ টেনে মুশফিক বলেছেন, ‘স্টোকস কিংবা ব্রড বলেন তারা গত ৮-১০ বছর ধরে এই কাজটা ঘরোয়া ক্রিকেটে করে আসছে। তাদের জন্য কতটা সহজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা।’

তারপরও শফিউল-কামরুলে হতাশ নন মুশফিক। পুরনো বলে কামরুল বেশ কার্যকরী বলেই চট্টগ্রাম টেস্টে দলে রাখা হয়েছে তরুণ এই পেসারকে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্টোকস ও বেয়ারস্টোর ১২৭ রানের জুটি ভাঙেন কামরুল ইসলাম। শফিউল অবশ্য বেশ কয়েকবার সুযোগ তৈরি করলেও সফল হননি।

এই দুই পেসার নিয়ে মুশফিকের ব্যাখ্যা, ‘শফিউল আর রাব্বি যে খুব খারাপ করেছে তা নয়। তারা এখান থেকে কিছু শিখতে পেরেছে। তারা বুঝতে শিখবে এমন উইকেটে প্রত্যেকেটি রান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যেকটি স্পেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো বলে যে রিভার্স সুইং করা যায়, এটা ওরা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। আশা করি এখান থেকে ওরা যা শিক্ষা নেবে তা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই