ব্রাজিলে ৩ দিনের শোক

দিনটি ফুটবলের জন্য এক শোকসন্তপ্ত দিন

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০১৬, ১২:৩৭ পিএম

শাপেকোয়েনস-ট্র্যাজেডিতে শোকাচ্ছন্ন সারাবিশ্ব। ক্লাবটির জার্সি ও লোগোর সবুজ রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বায়ার্নের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা, লন্ডনের ওয়েম্বলি, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ও ব্রাজিলের ক্রাইস্ট ডি রিডিমারে সবুজ বাতি জ্বালিযে কাল জানানো হলো সহমর্মিতা। ব্রাজিলের শাপেকোয়েন্সে ক্লাবের খেলোয়াড়সহ কলম্বিয়াগামী বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ব্রাজিলে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বার্সেলোনা তারকা লিওনেল মেসি ও নেইমার, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ওয়েইন রুনি নিহত খেলোয়াদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।

ব্রাজিলের শাপেকোয়েন্সে ক্লাবটি তাদের ইতিহাসের সবচাইতে বড় ম্যাচ দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব কাপের ফাইনাল খেলতে যাচ্ছিল। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার পর দলের মাত্র তিনজন খেলোয়াড় বেঁচে আছেন গুরুতর আঘাত নিয়ে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে এবং ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, দিনটি ফুটবলের জন্য এক শোকসন্তপ্ত দিন। ছোট্ট সান্তা ক্যাটারিনা শহরের এই ক্লাবটির হাজার হাজার ভক্ত গায়ে দলের জার্সি জড়িয়ে শহরের স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছেন। ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আইভান তোজ্জো বলেছেন, পুরো শহর অনেক বড় কিছু হারিয়েছে।

তিনি বলেছেন, মাত্র দুই লাখ লোকের শহর সান্তা ক্যাটারিনার সকল অধিবাসী কোননা কোনভাবে এই ক্লাবটির সাথে জড়িয়ে আছে। শহরের সবাই ক্লাবটিকে ভালোবাসে। দলটি যখন খুব ভালো করছিল ঠিক তখনই খেলোয়াদের এমন মৃত্যু সবার জন্যেই বিশাল বিপর্যয়ের খবর। শাপেকোয়েন্সে দলটি দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের ফাইনাল খেলার জন্য কলম্বিয়ার মেডেইন শহরে যাচ্ছিল।

শহরটির বাইরে একটি পার্বত্য এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ৮১ জন যাত্রীর ৭৫ জনই নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় (২৮ নভেম্বর) সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে মেডেইন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারকে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা জানান বিমানের পাইলট। এর পরই বিমানটির সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ফাইনাল খেলা যখন হওয়ার কথা ছিল ঠিক তখন দলের সকল ভক্তকে মাঠে সাদা কাপড় পরে এসে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছে দলের কর্মকর্তারা। ক্লাবটি যাত্রা শুরুর আগে দলের কোচ ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তিনি বলছিলেন, দলটির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ। তবে সেই ম্যাচ খেলা না হলেও শাপেকোয়েন্সে ক্লাবটিকে সম্ভবত জয়ী ঘোষণা করা হচ্ছে। ইন্টারনেট কেউ নাচছিলেন, কেউ সেলফিতে !

ম্যাচটা গতকাল হওয়ার কথা ছিল। প্রতিপক্ষ কলম্বিয়ার ক্লাব অ্যাটলেটিকো ন্যাশনাল। কোপা সুদামেরিকানা কাপের ফাইনালে নামার আগে প্রচুর অনুশীলনও করেছিল দলের চূড়ান্ত একাদশ। কিন্তু, শেষ ম্যাচটা আর খেলতে পারলেন না অ্যালান রাসেল, মার্সেলোরা। মাঝ আকাশেই ভেঙে পড়ল চ্যাপেকোয়েন্স ঋঈ-র চাটার্ড বিমানটি। মৃতের সংখ্যা ৭৬ স্পর্শ করে।

দক্ষিণ ব্রাজিলের ছোট্ট শহর চাপেকো। সেখান থেকেই চ্যাপেকোয়েন্স ক্লাবটি উঠে এসেছিল। দক্ষিণ অ্যামরিকার কোনও ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে এই প্রথমবার উঠেছিল দলটি। তাই ফাইনালে যাওয়ার আগে ক্লাবের ড্রেসিংরুমে প্রত্যেকের চোখেই উচ্ছ্বাস ফুটে উঠছিল। কেউ নাচ করছিলেন, কেউ আবার একে অপরকে জড়িয়ে ধরছিলেন, কেউবা আবার মজেছিলেন সেলফিতে। ফাইনালের পাঁচদিন আগে এমনই একটি ভিডিও দলের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছিল। আনন্দ হবে নাই বা কেন ! প্রথমবার যে দলের ইতিহাস বদলাতে যাচ্ছিলেন তারা।

আজ বিমানে ওঠার পরও ফুটবলারদের চোখে মুখে আনন্দ ধরা পড়ছিল। কিন্তু, কে জানত এই যাত্রাই তাদের শেষ যাত্রা হতে চলেছে ? তখনও ফুটবলাররা হাসিমুখে নিজেদের সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। এই হাসি তৃপ্তির হাসি, এই হাসি বিজয়ের হাসি। স্থানীয় সময় সোমবার রাত সওয়া দশটা নাগাদ মাটি ছেড়ে আকাশে পাড়ি দিল চাটার্ড বিমানটি।

বিমানে ছিলেন ৮১ জন যাত্রী এবং ন’জন বিমানের সদস্য। কিন্তু, মাত্র পাঁচজন ছাড়া কেউই প্রাণে বাঁচেননি। সত্যি অ্যারেনা কোন্দায় আর দেখা যাবে না শাপেকোয়েনসের বীরদের। থাকবেন তারা এখন ভক্ত-সমর্থকদের হৃদয়ের গভীরে।

শাপেকোয়েনসই আমাদের চ্যাম্পিয়ন : শোকস্তব্ধ শাপেকো, শোকস্তব্ধ ব্রাজিল, শোকস্তব্ধ গোটা ফুটবল দুনিয়া। মেডেলিনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক ম্যাচের অপেক্ষায় থাকা কলম্বিয়ার ক্লাব অ্যাটলেটিকো ন্যাশিওনালও এখন শোকস্তব্ধ। যে দলটির বিপক্ষে মাঠে শক্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা, সেই দলটির খেলোয়াড়দের জন্যই শোকের প্রদীপ জ্বালিয়ে এই মুহূর্তে প্রার্থনারত ন্যাশিওনালের সব খেলোয়াড়।

শোকার্ত ন্যাশিওনাল চমৎকার একটা প্রস্তাব দিয়েছে। যে কোপা সুদামেরিকানার শিরোপার জন্য শাপেকোয়েনসের বিপক্ষে লড়ার কথা ছিল তাদের, সেই প্রতিযোগিতার শিরোপাটা যেন দিয়ে দেওয়া হয় প্রতিপক্ষকে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়-স্টাফরা অন্য জগতে থেকেই শামিল হোন শিরোপা জয়ের উৎসবে। এ ব্যাপারে লাতিন আমেরিকান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা কনমেবলের কাছেই প্রস্তাব দিয়েছে তারা। গোটা প্রতিযোগিতায় দারুণ ফুটবল খেলা শাপেকোয়েনসের দলের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এর মাধ্যমেই জানানো হবে বলে মনে করে ন্যাশিওনাল।

বুধবার ম্যাচের পূর্বনির্ধারিত সময়ে বেশ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে ন্যাশিওনাল। তাদের সমর্থকেরা স্টেডিয়ামে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শাপেকোয়েনস ফুটবল দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও অন্য প্রতিনিধিদের প্রতি। স্টেডিয়ামে জ্বালানো হবে মোমবাতি। 

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ন্যাশিওনালের পক্ষ ২০১৬ সালের কোপা সুদামেরিকানার শিরোপাটি শাপেকোয়েনসকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, ‘আমাদের হৃদয় আজ ব্যথিত, আমরা শোকার্ত। এমন খবর আমরা কখনোই শুনতে চাইনি। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটা ব্যাপার। আমরা কনমেবলের কাছে কোপা সুদামেরিকানার শিরোপা ব্রাজিলীয় ক্লাব শাপেকোয়েনসকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি। আমাদের কাছে শাপেকোয়েনসই ২০১৬ সালের কোপা সুদামেরিকানা প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন।’ সূত্র: এএফপি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই