ভারতকে বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০১৭, ০৯:৫৯ পিএম

ঢাকা: ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে গুড়িয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নতুন চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে বিরাট কোহলির দলকে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নিল পাক বাহিনী। পাকিস্তানের দেয়া ৩৩৯ রানের চ্যালেঞ্জের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩০.৩ ওভারে মাত্র ১৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ফাখর জামানের মেইডেন সেঞ্চুরির বদৌলতে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই হোঁচট খায় ভারত। এ সময় মোহাম্মদ আমিরের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন রোহিত শর্মা। সঙ্গী শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ না নিয়েই সাজঘরের দিকে হাঁটা দেন ভারতীয় ওপেনার। এরপর আমিরের পরের ওভারে সাদা খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাঝঘরের পথ ধরেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নিজের পঞ্চম ওভারে শিখর ধাওয়ানকে বিদায় করেন আমির। সরফরাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২২ রান করেন তিনি।

৩৩ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারতের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন যুবরাজ আর ধোনি। কিন্তু শাদাব খান বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। তার করা ১৩তম ওভারের শেষ বলে যুবরাজ ফিরে গেলে বড় ধরনের ধাক্কা খায় ভারত। আম্পায়ার প্রথমে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া না দিলে শাদাব সঙ্গে সঙ্গেই সরফরাজকে রিভিউ নেয়ার জন্য তাড়া দেন। রিভিউতে লেগ বিফোরের সিদ্ধান্ত আসলে কোণঠাসা হয়ে টিম ইন্ডিয়া।

তখনও অভিজ্ঞ ধোনিকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিল ভারত। কিন্তু প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পুরণে ব্যার্থ হন তিনিও। হাসান আলির করা ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ইমাদ ওয়াসিমের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন ধোনি। জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে পাকিস্তান। দলীয় ৭২ রানে শাদাবের বলে কেদার যাদব বিদায় নিলে পরাজয়ের প্রহর গুনতে থাকে ভারত। তবে সপ্তম উইকেটে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হার্ডিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা। ৫৭ বলে ৮০ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন তারা।

দলীয় ১৫২ রানের মাথায় জাদেজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে পান্ডিয়া রানআউট হয়ে ফিরে গেলে ভারতের প্রতিরোধ ভেঙে যায়। এরপর দলীয় ১৫৬ রানের মাথায় পরপর জাদেজা ও অশ্বিন আউট হয়ে ফিরে গেলে ভারতের বড় হার সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়। হাসানের বলে জসপ্রিত বুমরাহ বিদায়ের সাথে সাথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের উৎসবে মেতে উঠে পাকিস্তান।

মোহাম্মাদ আমির ও হাসান আলি তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। শাদাব খান দুটি ও জুনায়েদ খান একটি উইকেট নেন।

রোববার (১৮ জুন) লন্ডনের কেনিংটন ওভালে শিরোপা লড়াইয়ে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। জাসপ্রিত বুমরাহর করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ওপেনার ফখর জামান। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি নো। ফলে নতুন জীবন পান ফখর। তারপর থেকেই হাত খুলে খেলছেন দুই ওপেনার। ২১ ওভারের মধ্যে আজহার আলি এবং ফখর জামান, দু’জনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

আজহার আলিকে নিয়ে ওপেনিং জুটিতে ১২৮ রান তুলে নতুন রেকর্ড গড়েন ফখর। বেঙ্গালুরুতে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রান তুলেছিলেন দুই ওপেনার আমির সোহেল ও সাঈদ আনোয়ার। এত দিন আইসিসির টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে এটা ছিল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ। ২১ বছরের সেই রেকর্ড ভেঙেছেন আজহার-ফকর। এরপর ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে সাঝঘরে ফেরেন আজহার আলী। তার আগে ৭৮ বলে ৬১ রান করেন এই ওপেনার। এরপরই যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ফখর। দুর্দান্ত সব শটস খেলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

৩১তম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানেড সেঞ্চুরি মারেন ফাখন জামান। সেঞ্চুরির করতে ৯২ বলে ১২টি চার ও দুটি ছক্কা হাকান তিনি। দলের স্কোর ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন তিনি। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে রবীন্দ্র জাদেজার তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেওয়ার আগে ১০৬ বলে ১২টি চার আর তিন  ছক্কায় ১১৪ রান করেন এই ওপেনার।

ফকর জামানের বিদায়ের পর রান সংগহের গতি ধরে রাখেন বাবর আজম আর শোয়েব মালিক। ৪৭ রানের জুটি গড়ার পর দলীয় ২৪৭ রানের মাথায় মালিককে যাদবের ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন ভুবনেশ্বর কুমার। দলীয় ২৬৭ রানের মাথায় বাবরকে সাঝঘরে পাঠান কেদার যাদব। এরপর পঞ্চম উইকেটে ইমাদ ওয়াশিম ও মোহাম্মাদ হাফিজ মিলে ৪৫ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংস পাকিস্তানকে বড় সংগহ এনে দেয়। নির্ধারতির ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় সরফরাজ আহমেদের দল

ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া ও কেদার যাদব ভারতের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন।

পাকিস্তান একাদশ: সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), আজহার আলি, ফখর জামান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আমির, শাদাব খান, হাসান আলি, জুনাইদ খান।

ভারত একাদশ: বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, জাস্প্রিত বুমরাহ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই