রাশিয়া বিশ্বকাপ

খাদ্য, পানি ও পোশাকবিহিন যৌনকর্মীদের ৩৬ ঘন্টা

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০১৮, ১১:৪৪ এএম

ঢাকা : রাশিয়ায় যৌনব্যবসা অবৈধ। তবুও বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে, গোপনে রয়েছে যৌনপল্লী। তা সেটা হোক কোনো অভিজাত এপার্টমেন্টে বা কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এসব স্থানে নারীদের অর্থের বিনিময়ে জোরপূর্বক দেহদানে বাধ্য করা হয়। তারপরও তাদের ওপর আছে পুলিশি খড়গ। মাঝে মাঝেই তাদেরকে আটক করা হয়।

খাদ্য, পানি ও পোশাকবিহীন নগ্ন অবস্থায় আটকে রাখা হয় ৩৬ ঘন্টারও বেশি সময়। রাশিয়ায় যৌন ব্যবসা নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাইজেরিয়ান কর্মকর্তারা। তারা বলে দিয়েছেন, বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে পাচারকারিরা সুবিধা নিতে চেষ্টা করতে পারে। এ জন্য তারা নাইজেরিয়া সীমান্তে নিরাপত্তা কড়াকড়ি করেছে। সপ্তাহখানেক আগে পাচার বিরোধী কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট করেছে যে, তারা রাশিয়া পাঠানোর চেষ্টাকালে ১০ নাইজেরিয় শিশুকে উদ্ধার করেছে। রাশিয়ায় অবস্থিত নাইজেরিয়া দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দায়তা হলো রাশিয়া সরকারের।

কারণ, বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার দায় তাদের। এ মন্তব্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করে নি। এ বিষয়ে অধিকারকর্মীরাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্য এ ইস্যুতে কাজ করতে গেলে কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয় না। মস্কো ভিত্তিক পাচার বিরোধী সংগঠন সেফহাউজ ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী ভেরোনিকা এন্টিমোনিক বলেছেন, মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে আইনে ঘাটতি রয়েছে রাশিয়ায়। এ সমস্যার বিষয়ে সরাসরি কোনো কর্মসূচি নেই সরকারের। যদিও ফৌজদারি বিধিতে দুটি ধারায় এ বিষয়ে কথা বলা আছে, তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন তা হলো অর্থহীন।

বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টগুলোকে সামনে রেখে ৫টি শহরে যৌনতা ভিত্তিক পাচার ও নারীদের বিপথগামী করার ওপরে সেমিনার আয়োজন করেছেন ভেরোনিকা এন্টিমোনিকা। সেখানে তিনি এ ইস্যুতে যেসব বাধা রয়েছে তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলার চেষ্টা করেছেন সমাজে নারীদের কোন দৃষ্টিতে দেখা হয়।

তার ভাষায়, বেশির ভাগই রাশিয়ানরা পাচার, পতিতাবৃত্তি ও ধর্ষণের জন্য নারীদের দায়ী করে থাকে। তারা মনে করেন, এসব নারী জেনেশুনেই এ পেশায় এসেছেন। সিলভার রোজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইরিনা মাসলোভা (৫৪) এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, যখনই কোনো সমস্যায় পড়েন তখনই সবার আগে দায়ী করা হয় যৌনকর্মীদের। দেখা দেয় তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। কিন্তু এসব নারী যে অন্যের হাতের পুতুল হয়ে এ কাজে আসতে বাধ্য হয়েছেন তা কেউ বুঝতে চায় না। জোরপূর্বক তাদেরকে এ পেশায় নামানো হয়েছে। তারা রাজি না হলে তাদেরকে প্রহার করা হয়। অকথ্য নির্যাতন সইতে হয়।

১৫ বছর ধরে রাশিয়ায় পতিতাবৃত্তিকে অপরাধের বাইরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ইরিনা মাসলোভা। তিনি বলেন, রাশিয়ায় যেসব নারী যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছেন তারা হচ্ছেন সেখানকার সমাজের সবচেয়ে বিপন্ন সদস্য। তিনি এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের একটি ঘটনা তুলে ধরেন। ওই সময় কিছু পুরুষ একটি পতিতালয় ভেঙে ফেলে এবং ১০ জন যৌনকর্মীকে পুরো নগ্ন হয়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করে। তাদেরকে এভাবে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে। ওই যৌনকর্মীদের পক্ষে মামলায় পরামর্শ দিয়েছিলেন ইরিনা মাসলোভা।

সেখানে তিনি বলেন, ওইসব নারীকে পুলিশ খাদ্য, পানি ও পোশাক ছাড়া আটকে রেখেছিল ৩৬ ঘন্টারও বেশি সময়। নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও তিনি একটি মাত্রা যোগ করেন। বলেন, যেহেতু যৌনকর্ম কোনো নিয়মিত পেশা বা নিয়ন্ত্রিত পেশা নয় তাই এ জন্য এ পেশায় নিয়োজিতদের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতি আছে। খদ্দেররা কনডম ব্যবহার করতে চান না। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তাই দেশের বাকি অংশের চেয়ে এ পেশায় লিপ্তদের মধ্যে এইচআইভিতে সংক্রমণের হার ১০ থেকে ১৪ গুন বেশি। সরকারের অনুপস্থিতিতে তাদের কাছে শেষ আশ্রয় হিসেবে এগিয়ে যান কিছু স্বেচ্ছাসেবী সেবাদানকারী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই