প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার ছাদ বাগান

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২, ০৩:৪৫ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : শিক্ষক মৌসুমী আক্তার। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ বাসার ছাদে শখ করে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। তার ছাদ বাগানে সবজি, ফলদ ও ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে । স্কুল শেষে তার বেশিরভাগ সময় কাটে ছাদ কৃষিতে।

তার ছাদ বাগানে উৎপাদিত ফল ও সবজি একদিকে যেমন নিজেদের নিরাপদ খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা মেটায়, পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর মাঝেও বিতরণ করছেন। তার এই দৃষ্টি নন্দন ছাদ কৃষি দেখে অনেকেই উৎসাহী হয়ে উঠছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় শিক্ষক মৌসুমী ২০১৯ সালের শেষের দিকে ছাদ বাগান করেন। বিভিন্ন খালি ড্রাম, প্লাষ্টিকের বড় কৌটা সিমেন্টের টবের মধ্যে তিনি ছাদ কৃষি করছেন।

তাছাড়া বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে এই বাগানে লাগানো হয়েছে টমেটো, বেগুন,বরবটি,করলা, মরিচ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, সিম, পুঁইশাক, লাল শাক প্রভৃতি। ছাদ জুড়েই রয়েছে কয়েক প্রজাতির লিচু, লেবু, আম, পেঁপে, মাল্টা, বড়ই ও ড্রাগন, আনারস। আছে গোলাপ ফুল, সূর্যমুখী, নাইট কুইনসহ নানা প্রজাতির ফুলগাছ। বাহারি ফুলের রঙে সাজিয়ে উঠেছে পুরো ছাদটি ।

এ যেন ছাদজুড়ে সবুজের সমারোহ। এ ছাদে উঠলে মনে হয়, এটি কোন এক দর্শণীয় জায়গা। একটু দাঁড়িয়ে জুড়ে যায় প্রাণ। এ বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়েই পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করেন তিনি।

বৃক্ষপ্রেমী মৌসুমী আক্তার তার শিক্ষকতার পাশাপাশি বেশি সময় দেন ছাদ বাগানে। এ বাগানের পরিচর্যাসহ উন্নত জাতের ফসল উৎপাদনই তার নেশায় পরিণত হয়েছে। এ বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়েই পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করেন তিনি।

শিক্ষক মৌসুমী জানান, ছাদ কৃষিতে তেমন পরিশ্রম নেই। স্বল্প খরচেই ছাদে বাগান তৈরী করা যায়। আমাদের সবজি ও ফল ক্রয় করতে হয় না। বাগান থেকে উৎপাদিত ফল ও সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীকে বিতরণ করেছেন। ছাদ বাগানে রয়েছে থাই কাটিমন জাতের আম গাছ। এ গাছ থেকে বারোমাস আম পাওয়া যায়। রয়েছে বছরে দুইবার ফল দেওয়া আম গাছ, থাই কাঁঠাল, আফ্রিকার কালো জাতের কিউজাই আম গাছ। এসব নতুন গাছে ফল আসবে আগামী বছর।

এসব গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন মৌসুমী আক্তার। তার স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করে আসছেন। তার দৃষ্টি নন্দন এই ছাদ কৃষি দেখে অনেকই উৎসাহী হয়ে বাসা বাড়িতে ছাদ বাগান করছেন। তাছাড়া তিনি মানুষদেরকে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন কিভাবে ছাদ বাড়ান গড়ে তোলে পরিবারে ফল ও সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন বাড়ির ছাদে এ বাগান শুধু শখের বিষয় নয়, পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করছে। ছাদ কৃষিতে বাগানের মাধ্যমে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পরিবেশ দুষণমুক্ত থাকে। বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া তাজা শাকসবজি ও ফল মুলের চাহিদা ও মেটে। এসব কারনে বাড়ির ছাদে বাগান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বাড়ির ছাদে বাগান করা হলে এটি প্রতিটি পরিবারের সবজি ও ফলমূলের চাহিদা মিটিয়ে ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে জানায়।

প্রতিবেশী মো: মাসুকুর রহমান বলেন, ‘আমার বাসার পাশেই শিক্ষক মৌসুমীর বাসা। তিনি ছাদে খুব সুন্দর ছাদ বাগান তৈরি করেছেন। ছাদ বাগান আমার খুব পছন্দ। তার ছাদ কৃষি দেখে আমরা উৎসাহিত হচ্ছি। চেষ্টা করব আমাদের বাসার ছাদে এ ধরনের ছাদ বাগান করতে।’
গৃহিণী লিমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের পাশের বাসার ছাদে অসাধারণ একটি বাগান করেছেন । তার বাগানে দেশী বিদেশী অসংখ্য ফলের গাছ রয়েছে। আছে বিভিন্ন জাতের সবজিও। সব সময় ফুলের গন্ধে মুখরিত হয়ে থাকে। তিনি যেভাবে ছাদে বাগান করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ছাদে তার মতো এমন একটি বাগান করার ইচ্ছে আছে।

মো. আবুল হোসেন বলেন, শিক্ষক মৌসুমীর ছাদ বাগানটি দেখতে খুবই সুন্দর। তার বাড়ির কাজ চলমান আছে। কাজ শেষ হলে এমন একটি বাগান করার ইচ্ছে রয়েছে।

ছাদ বাগান মালিক মৌসুমী আকার বলেন, তার বাগানে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফল গাছ রয়েছে। আছে নানা প্রকারের সবজি ও। বর্তমানে অধিকাংশ গাছে ফল আসলেও বাকী গাছগুলোও মৌসুম অনুযায়ী ফল দিতে শুরু করেছে। মূলত ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ থাকায় চাকুরির ফাঁকে এ বাগান করা হয়। শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদের মালিকরা এই ছাদবাগান দেখে উৎসাহী হয়ে বাগান করতে আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, শিক্ষক মৌসুমী আক্তারের ছাদে বিভিন্ন জাতের ফুল, সবজি ও গাছের চারা দিয়ে অসাধারণ বাগান করেছেন। আমি মনে করি, তিনি আগ্রহী কৃষাণী। তিনি দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফল, ঔষধি গাছ চাষ ও পরিচর্যা করেন। তার মতো যদি অন্যরাও ছাদগুলো ফেলে না রেখে সবজি অথবা ফলের বাগান করেন; তারাও লাভবান হতে পারবেন। তিনি আরও বলেন ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত স্বাস্থসম্মত খাদ্য শরীরের জন্য যেমন নিরাপদ একই ভাবে তা অনুকুল পরিবেশ ও আবাসন স্থানকে দুষণমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ছাদ কৃষি মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়ে তুলতে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই