ঢাকা: পাকিস্তানী সেই নারী মুখতার মাইয়ের কথা কেউ ভোলেনি। ভাইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অপমানের বদলা নেয়ার ঘটনায় বলি হয়েছিলেন মুখতার। স্থানীয় কাউন্সিলর আর গ্রাম্য মাতবরদের নির্দেশে প্রথমে তাকে বিবস্ত্র করে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। এরপর চলে ধর্ষণ উৎসব। গ্রামের ১৪ জন মিলে একে একে তাকে ধর্ষণ করে নিস্তেজ করে ফেলে।
ওই ঘটনায় পুরো বিশ্বমিডিয়ায় তোলপাড় হয়। ঘটনাটি ছিল ২০০২ সালের। তখন মুকতার মাইয়ের বয়স ছিল ৩০ বছর। এরপর কেটে গেছে আরো ১৪ বছর। সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে তার গোটা জীবন।
পাকিস্তানের সেই আদিবাসী নারী মুকতার মাই এখন বিশ্বের এক জনপ্রিয় মুখ। নারী নির্যাতনের প্রতিবাদের একটা ব্যাটন এখন তারই হাতে ধরা। গত ১ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচির এক ফ্যাশন শোতে তাকে দেখে গেছে র্যাম্প মডেল হিসেবে।
মুকতার মাইয়ের জীবনের সেই ১৪ বছরের জীবনটা গল্পের মতো। তার মুখ থেকেই শোনা গেছে সেই অভিজ্ঞতার কথা।
মুখতার মাইয়ের জন্ম পাকিস্তানের মিরবালায় এক আদিবাসী পরিবারে। গ্রামের আর পাঁচ জনের মতো খুব সাধারণ ছিল তার জীবন। কিন্তু ২০০২ সালের এক সালিশি সভার নির্দেশ বদলে যায় তার জীবন।
সাধারণ থেকে অসাধারণ মুকতার: মুখতারের ভাই তথাকথিত উচ্চ বংশীয় কাউকে অপমান করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অপমানের বদলা নেয়া হয়েছিল মুখতারের ওপর। স্থানীয় কাউন্সিলর আর গ্রামের অন্যান্য মাতবরদের নির্দেশে প্রথমে তাকে বিবস্ত্র করিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। এরপর এক এক করে মোট ১৪ জন তাকে ধর্ষণ করে। সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি তার দিকে। এক এক করে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল সালিশি সভার ভিড়ও।
নিজের গ্রামে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল করেছেন। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
বিশ্বের দরবারে আজ তিনি সমস্ত নির্যাতিতাদের মুখ। যেখানেই নারী নির্যাতনের খবর পান, ছুটে যান। তাদের লড়াইকে নিজের লড়াই মনে করেন।
গত ১ নভেম্বর করাচির এক ফ্যাশন শোতে তিনি মঞ্চে হাঁটেন। না, ‘মডেল’ হতে তিনি চান না।
মঞ্চে হেঁটে তার বার্তা, ‘এমন ঘটনা মানেই নিজেকে লুকিয়ে রাখা নয়, জীবন শেষ করে দেয়া নয়, বরং এক অন্য জীবনের শুরু।’
লাইট গ্রিন ব্রাইডাল সালোয়ার আর রূপোলি রঙের পাজামায় মঞ্চে খানিকটা জবুথবুই লাগছিল তাকে। পেশাদার মডেলদের মতো র্যাম্প ওয়াক না করতে পারলেও তিনি আসলে একজন ‘মডেল’-ই। নির্যাতিতাদের মডেল।
সোনালীনিউজ/এমএন