ঝিনাইদহে ৫৪৪ বিরোধ নিষ্পত্তি

  • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০১৮, ১২:০৫ পিএম

ঝিনাইদহ: বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ঝিনাইদহ শাখা গত ১০ বছরে ৫৪৪টি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। এর মধ্যে ১০৩ জন নারীর দেনমহর ও খোরপোষ বাবদ আদায় করে দিয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টাকা। সংস্থাটির মধ্যস্থতায় অনেক নারীর ভাঙা সংসার জোড়া লেগেছে। সংসার ফিরে পেয়েছে অনেক পুরুষ। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার বিরোধ নিস্পত্তির এই নজীর জেলার মানুষ আশার আলো দেখছেন। 

জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক রঙ মিস্ত্রির জীবন বিষিয়ে তুলেছিল তার স্ত্রী নুরুন্নাহার। স্ত্রীর একের পর এক মামলা আর পুলিশি ঝামেলা মোকাবেলা করতে জাহাঙ্গীর যখন হাফিয়ে উঠেছিল ঠিক তখন তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ঝিনাইদহ জেলা শাখার কর্মী বাবলু কুন্ডু ও মেহেরুন্নেছা মিনু। তারা উভয় পক্ষকে ডেকে বিরোধ নিস্পত্তি করে দেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চন্ডিপুর এলাকায় এক পাষণ্ড পিতা তার আপন প্রতিবন্ধি মেয়েকে ধর্ষণ করতো। এই ন্যাক্কার জনক ঘটনা মানবাধিকারের তদন্তে উঠে আসে। পুলিশ লম্পট বাবাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়।

সদর উপজেলার ডেফলবাড়িয়া গ্রামের বিউটি খাতুনের বিয়ে হয় পোড়া-বাকড়ি গ্রামের শামীম হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই স্বামী টাকার জন্য বিউটির উপর চাপ দিতে থাকে। এই টাকা দিতে না পারায় বাড়ি ছেড়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তারা তালাক দেয় না। এই অবস্থায় তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আর্থিক সমস্যার কারণে তারা মামলা-মকদ্দমা করতে পারছিলেন না।

ঠিক সেই সময়ে মানবাধিকার সংস্থায় অভিযোগ দেন। এই অভিযোগ পেয়ে সংস্থাটি বিচারের ব্যবস্থা করে দেনমহর আর খোরপোষ বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা আদায় করে দেন। এ ভাবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামের পাপিয়া খাতুন, বিউটি খাতুন, আঞ্জুয়ারা খাতুন, কাশিমপুর গ্রামের আঞ্জুয়ারা খাতুন, বেতাই গ্রামের হালিমা খাতুনসহ বহু নারী তাদের দিন বদলের গল্প শোনান। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সামাজিক বিচারে তার ভাঙা সংসার জোড়া লাগিয়েছেন। 

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ঝিনাইদহ শাখার কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ বছরে তারা ৬৬৭টি অভিযোগ গ্রহণ করে ৫৪৪টির নিষ্পত্তি করেছেন। যার মধ্যে অধিকাংশ স্বামীর ঘরে ফিরেছেন স্ত্রীরা। বাকি ১০৩টি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এই বিচ্ছেদে তারা দেনমহর আর খোরপোশ আদায় করেছেন এক কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। যা অসহায় নারীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তারা এই অর্থ কাজে লাগিয়ে বাকি জীবন কাটাচ্ছেন।

সংস্থাটির ঝিনাইদহ সদর ইউনিট সভাপতি আমিনুর রহমান জানান, সমাজে নির্যাতিত, মানবাধিকার বঞ্চিতদের নিয়ে তাদের কাজ। যারা অবহেলিত, যারা অর্থের অভাবে আদালত পর্যন্ত যেতে পারেন না তারাই চলে আসেন মানবাধিকার সংস্থায়। সংস্থাটি নির্যাতিতাদের জন্য এসসিডব্লিউএইচআর প্রকল্প চালু করে। সামাজিক বিচার (বিকল্প ব্যবস্থায়) করে সমস্যার সমাধান করেন। এ পর্যন্ত ৬৬৭ টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছেন। যার মধ্যে ১০৩ জন নারীর ১ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দেনমহর-খোরপোষ আদায় করেছেন। 

তিনি আরো জানান, সমাজে এখনো অনেক মানুষ আছেন যারা আদালতে যেতে সক্ষম নন। আর্থিক সমস্যা আর চেনা-বোঝা মানুষ না থাকায় এরা স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেন না। ফলে বিচারও পান না। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ঝিনাইদহে অনেক প্রসার ঘটেছে। তাদের সংস্থায় অভিযোগের পরিমান ক্রমেই বাড়ছে। 

এ ব্যপারে ঝিনাইদহ জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী সাংবাদিক শেখ সেলিম জানান, এটা খুবই একটা ভালো দিন। কারণ আমাদের সমাজে এখনো অনেকে আদালতে যেতে পারেন না। অনেকে বছরের পর বছর ঘুরে বিচার পান না। কখনো প্রতিপক্ষের ভয়ে মামলা করেন না। তারা এ জাতীয় সংস্থার কাছে নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই