ফাইল ছবি
ঢাকা: যুক্তরাজ্য থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে জরুরি বার্তা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে আমি বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে থাকলেও আমার মন পড়ে আছে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে। প্রতিটি মুহূর্ত আমি দেশের খবরাখবর রাখছি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।
স্নেহের শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জন্য মনটা খুবই ভারাক্রান্ত। তিনি মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন। তিনি একটি আধিপত্যমুক্ত, স্বাধীন ও ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং শাহাদাত পর্যন্ত সেই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সহিংসতার পথে নয়, বরং যুক্তি ও আদর্শের মাধ্যমে ইনসাফের লড়াইয়ে বিশ্বাসী ছিলেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শহীদ শরীফ ওসমান হাদির রক্ত বিফলে যাবে না। তার স্বপ্নের ‘ইনসাফের বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় দেশবাসী, আমরা শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এ বিচার করতেই হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে ধৈর্য ও অবিচলতার সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদেরকে দাবি আদায় করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারী কেউ যেন স্যাবোটাজের মাধ্যমে এ আন্দোলনকে কলুষিত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য।
দেশবাসী যখন হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার, সেই মুহূর্তে দেশে বেশ কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সে প্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা বলা জরুরি-
১. প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং প্রবীণ সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলা ও অপপ্রচারের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। স্বাধীন গণমাধ্যম রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা আমাদের সবাই মিলেই নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের আমলে যেভাবে গণমাধ্যমের উপর নগ্ন হামলা করা হতো সেই সংস্কৃতিতে আমরা ফিরতে চাই না। একইসাথে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন এবং যেকোনো ধরনের ঘৃণামূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন।
২. হাইকমিশন কার্যালয়সহ কয়েকটি কালচারাল সেন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. ধর্ম অবমাননা চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ। কেউ এই অন্যায় করলে আদালতের মাধ্যমে তার বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। বিচার নিজ হাতে তুলে নেওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়।
এ দেশের মূলধারার সকল ইসলামপন্থী দল ও সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী এবং কোনো অবস্থাতেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে নয়। পরিকল্পিত ওপায়ে স্যাবোটাজ করার জন্যই কোনো পক্ষ এ কাজ করে থাকবে বলে আমাদের ধারণা। ঘটনা ঘটার পূর্বে কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং ঘটনা শুরু হওয়ার দীর্ঘ সময় পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এগিয়ে না আসা প্রমাণ করে- প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা এই স্যাবোটাজ পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকতে পারে। দেশবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে, কেউ যেন স্যাবোটাজ করার সুযোগ না পায়।
আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই- যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ান এবং অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুন। সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে দ্রুত সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক করে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
দেশকে অস্থিতিশীল করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিভাজনের সুযোগ নিয়েই আধিপত্যবাদ আমাদের ওপর সওয়ার হয়। আমরা যদি আজ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তবে ওসমান হাদীর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। আসুন, বিভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। দেশের সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শহীদ হাদির রক্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ করুক। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। তিনি আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে হেফাজত করুন। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। চলো একসাথে গড়ি বাংলাদেশ।
পিএস







































