ফাইল ছবি
সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বহুল আলোচিত নবম পে-স্কেল নিয়ে জাতীয় বেতন কমিশনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া এ বৈঠক রাত পর্যন্ত চলে। বৈঠকে পে-স্কেলের খসড়া সুপারিশ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় এবং বেশ কিছু প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া বৈঠক রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। পে-কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী খান, মো. ফজলুল করিম, মো. মোসলেম উদ্দীন, সদস্যসচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিকসহ কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্র জানায়, পূর্ণ কমিশনের এ বৈঠকে কমিশনের প্রস্তুত করা ড্রাফট রিপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে সংশোধন আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় পরবর্তীতে আবারও পূর্ণ কমিশনের সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে অন্তত আরও তিনটি পূর্ণ কমিশনের সভা হবে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বর মাসে আরও দুটি সভা আয়োজন করবে পে–কমিশন। এরপর জানুয়ারির শুরুতে আরেকটি পূর্ণ কমিশনের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভা শেষে জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে কমিশনের রিপোর্ট জমা দেওয়ার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত পে-কমিশনের এক সদস্য জানান, তিন ধাপে নবম পে–স্কেলের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগোবে। প্রথম ধাপে কমিশন তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবে। দ্বিতীয় ধাপে সেই রিপোর্ট যাবে সচিব কমিটির কাছে। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদই কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর নতুন পে-স্কেল সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হবে।
গ্রেড সংখ্যা ও বেতন কাঠামো নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, কমিশন একটি ড্রাফট তৈরি করেছে ঠিকই, তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত হওয়ার আগে বেতন ও গ্রেড নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবে অতিরঞ্জিত কোনো সুপারিশ করা হবে না, বাস্তবসম্মত প্রস্তাবই থাকবে।
জানা গেছে, নবম পে-স্কেল নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন থেকে পাওয়া মতামত জাতীয় বেতন কমিশন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে। তবে এখনো পুরো প্রতিবেদনের লেখালেখির কাজ সম্পন্ন হয়নি। পে–কমিশনের একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কর্মচারীদের মহাসমাবেশ কিংবা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণায় কমিশন বিচলিত নয়। তারা নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মধ্যেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে পে–স্কেলের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে আপাতত কিছুটা শঙ্কা কাজ করছে। সচিবালয়ে সাম্প্রতিক আন্দোলন দমন প্রক্রিয়া এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের পর সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। সে কারণে আপাতত কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্য বিবেচনায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার চিন্তা করছেন তারা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, অবশ্যই তারা দাবি পেশ করবেন, তবে সব দাবি রাস্তায় নেমে আদায় করতে হবে-এমনটা নয়। আলোচনার মাধ্যমেই পে–স্কেলের দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচিবালয়ের ভেতরে সাম্প্রতিক অপ্রীতিকর ঘটনায় বাইরের কর্মচারীরা সচিবালয়ের কর্মচারীদের ওপর ক্ষুব্ধ-এই বাস্তবতাও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব বেল্লাল হোসেন বলেন, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে তারা একটি চিঠি দিয়েছেন এবং সেই সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। বৃহস্পতিবার তারা দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের বৈঠকে বসবেন। ওই আলোচনার ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে সরকারি চাকরিজীবী বিধিমালা ও শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলী। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধিমালার মধ্যে থেকেই কর্মসূচি দিতে হবে। শৃঙ্খলা বহির্ভূত কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে গত জুলাই মাসে জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মচারীদের একটি বড় অংশের দাবি, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই নবম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
এসএইচ







































