• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

রংপুরে অল্পবয়সে গর্ভধারণের হার প্রায় ৫০ শতাংশ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম
রংপুরে অল্পবয়সে গর্ভধারণের হার প্রায় ৫০ শতাংশ

ঢাকা: একটি জরিপে দেখো গেছে সারাদেশের মধ্যে শুধু রংপুরে অল্প বয়সে গর্ভধারণ হার ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। সারা দেশের মধ্যে রংপুরই এগিয়ে আছে অল্প বয়সে গর্ভধারণের দিক থেকে। 

যা সবাইকে ভাবাতে বাধ্য করছে। এদিকে, দেশে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে ১৮ এর নিচে গর্ভধারণের সংখ্যাও বেশি। সারাদেশের ৬৪ জেলায় ৩১৭৫ পরিবারে পরিচালিত এক জরিপে এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। 

বুধবার (২২ মার্চ) ঢাকার একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সভায় ‘মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই জরিপটি প্রকাশ করা হয়। 

ওয়াই-মুভস প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ইয়েস বাংলাদেশ এবং ইউথ ফর চেঞ্জ।

জরিপ প্রসঙ্গে বলা হয়, জুন ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২ সময়কালে যুবদলের মাধ্যমে জরিপটির উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের ৬৪ জেলায় ৩১৭৫ পরিবার, বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর অংশগ্রহণে এই জরিপটি পরিচালিত হয়।

এতে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন আয়ের পরিবারে (মাসিক ২৫০০ টাকা) ১৮ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি (৪৬.৩ শতাংশ)। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৩৫.৮ শতাংশই জানান যে তারা ১৮ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করেন, যার হার রংপুরে সর্বোচ্চ (৪৮.৯ শতাংশ)।

জরিপে আরও দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের (১৪-৪৯ বছর বয়সী নারী) ৯৩.৯ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত এবং ৭৮.৪ শতাংশ তা অনুসরণ করেন। ৬৯.৩ শতাংশ পরিবারে পুরুষ এবং নারী সদস্য একত্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে তারা তথ্য পান মূলত টেলিভিশন (৫৩.৭%), কমিউনিটি ওয়ার্কার (৩৩.২%) এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (২৯.৫%)।

যুব উন্নয়ন সংস্থা ইয়েস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মূল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জরিপকৃতদের ১৮ শতাংশ নারীই জানিয়েছেন তারা বিগত ১২ মাসে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২১.৯ শতাংশ নারীর মাসিক পারিবারিক আয় ২৫০০ টাকার কম এবং ৯.৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার বেশি।

তিনি আরও বলেন, ১৪.৭ শতাংশের দাবি তারা পড়াশোনা এবং চাকরি ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। জরিপকৃত ৪৬.৭ শতাংশ পরিবারে শিশুরা কোনও না কোনভাবে বাসায় কিংবা ঘরের বাইরে শারীরিক কিংবা মানসিক শাস্তি বা আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।

সুপারিশ হিসেবে তুলে ধরা হয়, একাগ্র প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের আরও জোরালো ভূমিকা পালন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং ব্যবস্থা, বাজেট বৃদ্ধি, তথ্যের ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক বলেন, “নারী, বিশেষ করে কন্যা শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই জরিপের ফলাফল সেই কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধশীল করতে সহায়তা করবে। যুবারা পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাদের সঙ্গে নিয়েই সবাই মিলে একত্রে কাজ করার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”

বিশেষ অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা বলেন, শিশুদের ভবিষ্যত উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অগ্রগতি ঘটছে। বাংলাদেশ সরকার নারীবান্ধব সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বেই নারীদের প্রতি সহিংসতার চিত্র বিদ্যমান। নারীদের গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন এখনো অনুপস্থিত।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি একটি দেশের নারীদের সার্বিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরী। নারীদের নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে- এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি, কিন্তু আরো অনেক দূর যেতে হবে। এটা আমাদের সামগ্রিক দায়িত্ব।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (কৈশোরকালীন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য) ডা. মনজুর হোসেন বলেন, কিশোর কিশোরীদের উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সবার স্বাস্থ্য উন্নয়ন কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। সব সংস্থার সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের একত্রে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণের হার কমাতে আমাদের কাজ করতে হবে। এজন্য জন্ম নিবন্ধনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

পুরো আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু। আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস, গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ)  উপপরিচালক (ইনোভেশন) আরিফুল হক মামুন, মুস্তাসিম বিল্লাহ, উপপ্রধান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ; ড. মুনিরা বেগম, জয়েন্ট চিফ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, ফেরদৌসি বেগম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এসআরএইচআর লিড এবং এসডিজি প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন সদস্য প্রতিনিধি।

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!