• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুধের দাম না বাড়ায় হতাশ দুগ্ধ খামারিরা


পাবনা প্রতিনিধি  মে ২৩, ২০২৩, ১২:১৮ পিএম
দুধের দাম না বাড়ায় হতাশ দুগ্ধ খামারিরা

পাবনা: নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন দুধের দামের ঠিক উল্টো চিত্র। প্রতি লিটার দুধ পাইকারি বাজারে ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে উৎপাদন খরচের থেকেও কম দামে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাবনার অনেক খামারি।

বর্তমান সময়ে খোলাবাজারে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কিন্তু সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে হয় লিটারপ্রতি ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার সমিতির সঙ্গে যুক্ত থাকা খামারিদের প্রতিষ্ঠান-নির্ধারিত এই দামের বাইরে দুধ বিক্রির সুযোগ নেই। কিন্তু এই ব্যবস্থার কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের। তাই অনেকে গরু পালনই বন্ধ করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দুধের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাবে বলে ধারণা করছেন খামারিরা। প্রতি লিটার দুধের দাম অন্তত ১০ টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
 
সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় নিয়ন্ত্রিত ছোট-বড় ৪০০ গোচারণভূমিতে উন্নত জাতের এক লাখের বেশি গরু পালন করেন খামারিরা। এসব গরু থেকে আসা আয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দেড় লাখ পরিবার। এখানে উৎপাদিত প্রায় দুই লাখ লিটার তরল দুধ সংগ্রহ করে সরকারি সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা এবং বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। মূলত এসব প্রতিষ্ঠানই দুধের দাম নির্ধারণ করে দেয়।
 
এসব খামারিদের অভিযোগ, গো-খাদ্যের উচ্চ মূল্যসহ দুধ উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধিকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ কারণে দিন দিন গরু পালনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা।
 
দুধের দামের একটি তুলনামূলক হিসাব দিয়ে বেশ কয়েকজন খামারি জানান, প্রতি লিটার ৪৫-৪৮ টাকা দরে খামারিদের কাছ থেকে দুধ ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানগুলো। ননি আলাদা করার পর তরল দুধ প্যাকেটজাত করে ৮৫ টাকা লিটারে বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ কেনা দামের প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সেই সব দুধ। প্রতি লিটার দুধ থেকে পাওয়া ননিতে যে পরিমাণ ঘি উৎপাদিত হয়, তার মূল্য ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধ থেকে অনেক বেশি লাভ করছে। কিন্তু খামারিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা। 
 
পাবনার বেড়ার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন মিল্ক ভিটা সমবায় সমিতির সভাপতি আলম বলেন, আগে সমিতির মাধ্যমে দুই শতাধিক খামারি প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করতেন। এখন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। কারণ, খামারিরা খোলাবাজারে দাম বেশি পাওয়ায় সমিতিতে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘খামারিরা দুধের কম দাম পাচ্ছেন, কথাটা একদমই সত্য। তবে কোভিড-১৯ করোনাকালীন সময়ে ছোট কোম্পানিগুলো সংকটে পড়ায় বড় কোম্পানিগুলো এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’
 
বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার মিনা ডেইরি ফার্মের মালিক মাহফুজা খাতুন মিনা বলেন, তিনি দুটি ডেইরিতে তাঁর খামার থেকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ লিটার দুধ সরবরাহ করতেন। কিন্তু ন্যায্য দাম না পেয়ে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তিনি খোলাবাজারে বিক্রি করেন। দুধের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে অধিকাংশ খামারই বন্ধ করতে হবে বলেও জানান খামারিরা।
 
এদিকে মিল্ক ভিটা-সংশ্লিষ্ট খামারিরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সমিতির সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। সে কারণে খোলাবাজারে দুধের দাম বেশি হলেও তাঁরা সমিতি-নির্ধারিত দামে দুধ সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
 
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সোনালীনিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু পালনের মাধ্যমে খামারিরা কীভাবে লালন পালন ব্যয় কমিয়ে রাখতে পারেন, সে ব্যাপারে খামারিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এসএইচ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!