• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে গরু-মহিষ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৮, ২০২৩, ১১:০৭ এএম
নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে গরু-মহিষ

ঢাকা: বরাবরের মতো এবারও চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার বেশি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। তবু ঈদুল আজহা সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত গলিয়ে ঢুকছে গরু-মহিষ। 

কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার। কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনও প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে আনা হচ্ছে গরু। আর এ কাজে জড়িত প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীর একটি চক্র।  

২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালনপালন বেড়ে যায়।

আর সেটাই বাংলাদেশকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। দেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ লাখ খামার আছে। এবার কোরবানির ঈদে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। সে হিসাবে চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত আছে। কয়েক বছর ধরে কোরবানি ঈদের সময়টাতে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় আসেনি পশু। তবে এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন।

কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ একাধিক উপজেলায় বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের পশু ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এসব পশুর অধিকাংশ রাখা হচ্ছে রামুর গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন এবং চকরিয়ার বিভিন্ন স্থানে। 

এমনকি মিয়ানমার থেকে আসা পশুর হাটও বসছে ওই এলাকায়। প্রতিটি গরু ও মহিষ মিয়ানমার থেকে ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। গত ৮ জুন নাইক্ষ‍্যংছড়ি ১১ বিজিবির আলাদা অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের ৪০টি গরু জব্দ করে।

কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ছড়ারকুলে বসানো হয়েছে অবৈধ গরুর হাট। হাটটি চালান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা। প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে পরিচালনা করা এই হাটের ক্রেতারা সাধারণ মানুষ হলেও বিক্রেতারা চোরাকারবারি। 

মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজারের রামুর ঈদগড় হয়ে গত কয়েক মাসে শুধু ঈদগড় ইউপি সদস্য রুস্তম আলীর নেতৃত্বে পাচার হয়েছে ১০ হাজার গরু। নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের ফুলতলী, ভাল্লুকখাইয়া, জারুলিয়াছড়ি, জামছড়ি, দোছড়িসহ ৮ পয়েন্ট দিয়ে গরু এনে গর্জনিয়া বাজারের আশপাশে বা কচ্ছপিয়া ইউপির বিভিন্ন স্থানে রেখে টাকার বিনিময়ে ইজারাদারের কাছ থেকে রসিদ নিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।

কুমিল্লার বড় এলাকাজুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। এ ছাড়া পাশের জেলাগুলোর সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে এবার অবৈধভাবে পশু ঢুকছে। 

সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লা অঞ্চলে মাহবুব নামে এক ব্যাপারী প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ গরু হাতবদল করেন। তিনি উখিয়ার একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। কুমিল্লার খামারি ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা পশু পালন করে বছর একটি ঈদে স্বপ্ন দেখি। আর চোরাইভাবে ভারতীয় গরু এনে আমাদের স্বপ্ন চুরমার করা হয়।

সিলেটের সীমান্ত দিয়েও প্রতিদিন আসছে ভারত থেকে গরু। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, কোম্পানীগঞ্জ সীমানার ১২৬০ নম্বর পিলারসংলগ্ন হয়ে দমদমা নালা দিয়ে গরু ঢুকছে। পরে সেগুলো গোয়াইনঘাট এলাকার ভিতরগুল ও বিছনাকান্দি হয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে যায়। ভারতের খাসিয়া নাগরিকরা দিনে গরুগুলো নির্জন স্থানে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে এনে রাখে। রাতের আঁধারে সেগুলো কাঁটাতারের নিচ দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়। এ ছাড়া সিলেটের জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সীমান্ত দিয়েও পশু ঢুকছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর পাশে বাগানবাজারে। একদিকে ভারত, অন্যদিকে খাগড়াছড়ির রামগড়ের মাঝে এ পশুর হাট। সপ্তাহের শুক্র ও রোববার সকাল থেকে হাটে কেনাবেচা শুরু হয়। স্থানীয় এক খামারি বলেন, ভারত থেকে গরু এসে এ বাজার ভরে গেছে। খুব কম দামে এখানে গরু বিক্রি হওয়ায় সারাদেশ থেকে ব্যাপারী এ বাজারে ছুটে আসছে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু চোরাপথে বাংলাদেশে ঢুকছে। শুক্রবার ভোরে ভারতের ১০১ ফুল কাবাডাবরী ও বাংলাদেশের আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে গরু পারাপারের সময় বিএসএফের গুলিতে গৌতম বর্মণ নামের ভারতীয় যুবক মারা যান।

গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চোরাপথে অবৈধভাবে গবাদি পশু দেশে প্রবেশ কঠোরভাবে বন্ধ করা এবং দেশের সীমান্ত এলাকায় গবাদি পশুর বিট বা খাটাল স্থাপন কয়েক বছর ধরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুশাসন রয়েছে। বিট বা খাটাল বন্ধ থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জননিরাপত্তা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সই নকল করে জাল ও ভুয়া চিঠি ইস্যু করে অবৈধ বিট বা খাটাল স্থাপন করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় রয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় গরু আনা-নেওয়ার পথে প্রকৃত খামারিরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভারত কিংবা মিয়ানমারের গরু সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছোট খামারিরা অনেক সময় কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিজিবি কোনো ধরনের টোকেন দিয়ে গরু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। সীমান্তে গরু অনুপ্রবেশের বিষয়টি বিজিবি দেখভাল করে। কোরবানির ঈদ ঘিরে ভারতীয় গরু দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!