• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় প্রধান শিক্ষককে পেটালো ছাত্রলীগ নেতা


লালমনিরহাট প্রতিনিধি নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় প্রধান শিক্ষককে পেটালো ছাত্রলীগ নেতা

লালমনিরহাট: স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় লালমনিরহাটে খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে নুর ইসলাম নামে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। রোববার (৫ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিল্যালয়ের মুল ফটকের সামনে এসব ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে আহত ওই প্রধান শিক্ষককে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। অভিযুক্ত নুর ইসলাম খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের জন্য অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী সহ মোট ৫টি পদের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই ৫টি পদের বিপরীতে ৪০ জন প্রার্থী আবেদন করেন।  বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে যোগসাজসে গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন যাদের চাকরি দেবেন তাদের নিয়ে রোববার (৫ নভেম্বর) বিকালে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করেন। গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এমন খবর শোনে ছাত্রলীগ নেতা নুর ইসলাম অন্যান্য চাকরি প্রত্যাশী ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের চারিদিকে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বিদ্যালয় থেকে বের হলে ওই ছাত্রলীগ নেতাসহ অন্যান্যরা প্রধান শিক্ষককে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এসময় চাকরির জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওই টাকা ফেরত চাওয়া হয়। এসময় প্রধান শিক্ষক টাকা দিতে না চাওয়ায় তাকে মার ডাং করে শরীরের জামা কাপড় ছিরে ফেলে ওই ছাত্রলীগ নেতাসহ আরো কয়েকজন। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান আসলে তার সামনে আবারও প্রধান শিক্ষককে পেটানো হয় এবং সভাপতিকেও অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এছাড়াও এলাকার কয়েকজন মহিলা হাতে ঝাড়ু নিয়ে তাদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত এলাকাবাসী ও মহিলাগণ ক্লাসে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীদের উপরেও চড়া হন। এসময় এলাকাবাসী বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড মতিয়ার রহমান থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাকরি প্রত্যাশী জানান, এই নিয়োগ পরীক্ষা গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে বলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের জানান। কিন্তু যাদের চাকুরী দেয়া হবে শুধুমাত্র তাদেরকে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দিয়ে গোপনে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে নিয়োগ পরীক্ষায় নেওয়ার জন্য খবর না পাওয়া প্রার্থীরাও পরীক্ষা দিতে আসেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ৫জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নিয়েছেন শুধু তাদেরকে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেন এবং পুলিশের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।

চাকুরী প্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা নুর ইসলাম জানান, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি আমার চাকুরীর জন্য প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। গত ৫ বছরেও তিনি আমার চাকুরী নিশ্চিত করেন নাই। উল্টো তিনি আমার চাকুরী নিশ্চিত হয়েছে বলে শান্তনা দেন। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি তারা গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। বিষয়টি জানতে পারলে চাকরি প্রার্থী এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের উপর চড়াও হয় এবং তারা টাকা ফেরত চায়। টাকা দিতে না পারায় তাদের সাথে প্রধান শিক্ষকের ধাক্কাধাক্কি হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ক্লাস চলায় নিয়োগ পরীক্ষাটি বিকালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে এলাকার নুর ইসলামসহ ২০/২৫ জন আমার পথরোধ করে মারধর করে। পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাড মতিয়ার রহমান এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।

সোনালীনিউজ/এসএ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!