কুষ্টিয়া: কুমারখালীতে পানিতে তলিয়ে থাকে তিনটি বিলের প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা কৃষিজমি। শুধু শুষ্ক মৌসুমে একবার ধান চাষ করা যায় এসব জমিতে। বছরের সাত আট মাস থাকে জলাবদ্ধতা।
উপজেলার ময়েন মোড়-ভবানীপুর সড়কের পাশের খালটি দখল করে পুকুর খনন এবং বাড়িঘর নির্মাণ করায় সাড়ে তিন কিলোমিটার খালের তিন কিলোমিটারই দখল হয়ে গেছে। এ কারণে বিলের পানি গড়াই নদী নামতে পারে না। এতে বছরের সাত থেকে আট মাস জমিগুলোতে পানি জমে থাকে। মাত্র একবার ধান চাষ করা যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকেরা।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক ঘেঁষে কুমারখালীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া, চাঁদপুর ও বাঁশআড়া বিল অবস্থিত। সেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা কৃষিজমি রয়েছে। ছয়-সাত বছর আগে বিলের পানি ইউনিয়নের ময়েন মোড়-ভবানীপুর গ্রামীণ সড়কের পাশের খাল দিয়ে গড়াই নদীতে চলে যেত। এর মধ্যে বোর্ড অফিস খাল এবং ময়েন মোড়-এলংগী রেলসেতু খাল রয়েছে। এলাকাজুড়ে পাশাপাশি তিনটি বিল। জমে আছে হাঁটুপানি। সেখানে কচুরিপানা, কলমি, শাপলা জন্মেছে। এখন পরিষ্কার করছেন কৃষকরা। বিলের মধ্যে কয়েকটি পুকুর রয়েছে। নিষ্কাশনের খালে কাটা হয়েছে পুকুর, রয়েছে বসতবাড়ি।
বহলবাড়িয়া বিলের ষাটোর্ধ্ব কৃষক মসলেম উদ্দিন জানান, আগে খাল ছিল, নদীতে পানি চলে যেত। এখন খাল বন্ধ হয়ে পানি বের হয় না। কোনো রকমে এক ফসল হয়। জমির মালিক সাহেব আলী জানান, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। কেউ চাষ করে, কেউ ফেলে রাখে, কেউ পুকুর কেটেছে। সেখানে এক ফসলও হয় না। খালটি খননের দাবি তার।
চাঁদপুর বিলের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে কচুরিপানা জমে থাকে। সেগুলো প্রতিবছর পরিষ্কার করতে অনেক কষ্ট হয়। চাষে খরচও বেশি। স্থানীয় মুকুল বিশ্বাস বলেন, আগে ধান, পেঁয়াজ, রসুনের চাষ করতাম। কিন্তু পানির কারণে এখন এক ফসল হয়। কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, আগে এলংগী খাল দিয়ে পানি বের হয়ে চলে যেত নদীতে। এখন খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পানির জন্য ধান লাগানো যায় না। আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করছেন তাইজাল শেখের ছেলে সুজন আলী। তিনি দাবি করেন, পাঁচ বছর আগে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তখন খাল নয়, রাস্তার পাশে পুকুর ছিল। নন্দলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে অস্তিত্ব আছে মাত্র ৫০০ মিটারের। তিন কিলোমিটারই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। খাল খননের জন্য উপজেলা প্রশাসন, কৃষি অফিসকে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম জানান, তিনটি বিলের পানি বের করা গেলে সেখানে অন্তত ছয় হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব।
কুমারখালী ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল জানান, কৃষক, কৃষি বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এব্যাপাওে সমাধানের জন্য আলাপ আলোচনা চলছে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :