• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নৌকা পেয়েও যেসব কারণে হারলেন মমতাজ


মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৮, ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
নৌকা পেয়েও যেসব কারণে হারলেন মমতাজ

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের তিনটি ইউনিয়ন) আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি) কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও হেরেছেন। এ আসনে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে হেরে গেছেন তিনি।

একাধিক কারণে মমতাজ হেরেছেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন নিজ পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব, দলকে পারিবারিকীকরণ, দলের অন্তঃকোন্দল, পদ্মার চরের বালুমহালের ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব, আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে তাদের ক্ষেপিয়ে তোলা ও দলের ভেতর একক নেত্রীত্বের প্রভাব বিস্তার করার কারণেই হেরেছেন মমতাজ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে জেলার প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন মমতাজ বেগম। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন যখন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন, তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন তিনি। সিংগাইর থেকে আশানুরূপ ভোট না পাওয়ায় মমতাজের ওপর ক্ষিপ্ত হন মহিউদ্দিন।

প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভায় গোলাম মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত আয়, বাড়ি, গাড়ি নিয়ে বক্তব্য দেন মমতাজ। তাতে তিনি রেগে যান এবং এবারের নির্বাচনে মমতাজে বিরুদ্ধে অবস্থন নিয়ে জাহিদ আহমেদ টুলুকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে কাজ করেন। সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা কর্মীই মমতাজের নির্বাচনে কাজ না করে জাহিদ আহমেদের পক্ষে কাজ করেছেন।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলনে ত্যাগী ও উপজেলার জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে মমতাজ বেগম নিজে সভাপতি হন। এ ছাড়া তার সাবেক স্বমী, প্রয়াত বয়াতি রশিদ সরকারের ভাগনে শহিদুর রহমান শহিদকে সাধারণ সম্পাদক করেন। সাধারণ সম্পাদক থেকে বাদ দেওয়া হয় দলের এই উপজেলার জনপ্রিয় নেতা দেওয়ান আব্দুল মাজেদ খানকে।

নিজের মেয়ে কানাডাপ্রবাসী রাইসা রোজকে উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি করেন মমতাজ। ভাতিজা ফিরোজ হোসেনকে জয়মন্টপ ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন তিনি।

একক প্রভাব খাটিয়ে সাবেক স্বামী রশিদ সরকারের ছেলে শফিউল বাশারকে সিংগাইর পৌরসভার মনোনয়ন দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত করেন।

বাবা মধু বয়াতির আগের স্ত্রী ও তিন মেয়েকে ওয়ারিশ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে মমতাজের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের একঘরে করে রাখতেন। মমতাজের সৎমা ও তার তিন বোন এবারের নির্বাচনে মমতাজের বিরুদ্ধে গিয়ে দেওয়ান জাহিদ আহমেদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান।

এবারের নির্বাচনে সিংগাইর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র চারিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেওয়ান রিপন মমতাজের পক্ষে কাজ করেছেন। বাকি ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা দেওয়ান জাহিদ আহমেদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করেছেন।

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান প্রকাশ্যে সংবাদ সন্মেলন করে মমতাজের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণার ঘোষণা দেন। তার আগে পদ্মার চরের বালুমহাল নিয়ে সাইদুর ও মমতামের পক্ষে মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে। বালুমহাল নিয়ে পাল্টাপাল্টি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়েছে থানায়।

জাতীয় সংসদে এবং বিভিন্ন সময়ে সভা সমাবেশে আলেম-ওলামাদের কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ায় তারাও ক্ষেপেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চায়ের দোকানগুলোতে ভোটারদের মধ্যে এই সব বিতর্কিত বক্ত্যেব্যের সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!