• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তোপের মুখে মেয়র


লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি মার্চ ২৮, ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম
মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তোপের মুখে মেয়র

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে রায়পুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মঞ্জুরুল আলমের প্রতিবাদী বক্তব্যে স্থানীয় পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। পরে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা বিরোধীতা করে মেয়রকে বক্তব্য দিতে বাধা দেয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বক্তব্যে শোনা যায়, মেয়র রুবেল তাকে (মঞ্জুরুল আলম) ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রায়পুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে। 

এদিকে বিষয়টি জানতে বুধবার (২৭ মার্চ) কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা ডা. মঞ্জুরুল আলম ও রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটের সঙ্গে। মঞ্জুরুল আলম রায়পুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কেরোয়া এলাকার বাহাদুর বাড়ির বাসিন্দা ও পেশায় হোমিও চিকিৎসক।

মঞ্জুরুল আলম জানান, রায়পুর থানা মসজিদের বিপরীত পাশে মঞ্জুরুল আলম, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আহম্মদের জমি রয়েছে। পুরতন ভবন ভেঙে সেখানে যৌথভাবে তাদের একটি ৯ তলা ভবন নির্মাণাধীন। ভবনের উঠার জন্য নিচতলায় যথেষ্ঠ পরিমাণ জায়গা রেখে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু কোন নোটিশ ও তথ্য ছাড়াই ৪ মার্চ পৌরসভার লোকজন এসে ভেঙে দেয়। ঘটনার সময় তিনি রায়পুর উপজেলা পরিষদে ও তার অংশীদার সৈয়দ আহম্মদ পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। খবর পেয়ে তিনে এসে সিঁড়ি ভাঙার কারণ জানতে চান। কোন নোটিশ ও তথ্য ছাড়াই সিঁড়ি ভাঙায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তবে কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। পরে বিষয়টি তিনি থানার ওসিকে জানান। ওসি তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। এরমধ্যে তিনি ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নকে জানান। এতে এমপি নয়ন বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দিলে তিনি থানায় অভিযোগ দেননি। ওইদিন রাতেই তিনি ওমরাহ করার জন্য রায়পুর থেকে চলে যান। পরদিন তিনি রায়পুর ছিলেন না। ওমরাহ থেকে ফিরে তিনি জানতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে মেয়র আদালতে মামলা করিয়েছেন। 

মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমাকে মেয়র ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলেছে। আমি রায়পুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার। ১৯৬৮ সালে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হই। আমি রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। দল থেকে আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। এরপর আমি আর কোন পদপদবী নেওয়ার জন্য চেষ্টাও করিনি। আমি ছেলের সঙ্গে আমেরিকা থাকি। অন্যায় করলে দেশের আইন অনুযায়ী আমিও শাস্তি পাবো। প্রথমদিন মারমারি হয়নি। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে তার প্রমাণ রয়েছে। পরদিন ঘটনাস্থল ছিলামই না। এরপরও আমার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, পৌরসভা কার্যসহকারী মহিউদ্দিন বিপু বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রায়পুর আদালতে মঞ্জুরুল আলম, সৈয়দ আহম্মদ ও তার ছেলে আমির হোসেনের নামে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। 

এদিকে বক্তব্য জানতে বুধবার বিকেলে রায়পুর পৌর কার্যালয়ে গিয়ে মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটের কার্যালয়ে গেলে তিনি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, পথচারীদের হাটার জায়গা না রেখেই মঞ্জুরুল আলমরা পৌর আইন ভেঙে সিঁড়ি নির্মাণ করেছে। খবর পেয়ে পৌরসভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সেখানে যায়। ওই সিঁড়ি ভাঙাও হয়নি। কিন্তু তিনি উচ্ছৃঙ্খল কথাবার্তা বলেন আমাদের লোকজনকে। এনিয়ে আমি কোন মামলা করিনি। তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন। জনস্বার্থে পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ করে থাকে। তখন নোটিশ করার সুযোগ থাকে না। তবে মঞ্জুরুল আলমকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্বোধন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মঞ্জুরুল আলমকে মুক্তিযোদ্ধা বললেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। আমার সাথে কোন মুক্তিযোদ্ধার ঝামেলা হয়নি। ব্যক্তি মঞ্জুরুল আমার লোকজনের সাথে ঝামেলা করছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সোয়া ১টার দিকে মোবাইলফোনে পৌরসভার কার্যসহকারী ও মামলার বাদী মহিউদ্দিন বিপু বলেন, আমরা নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা নোটিশ মানেনি। পৌরসভার প্রকৌশলীসহ ৪ মার্চও নোটিশ নিয়ে যাই। কিন্তু তারা আমাদের মারধর করে। এ ব্যাপারে কোন মীমাংসা হয়নি। এজন্য পৌরসভার মেয়রসহ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় মামলা করেছি। 

রায়পুর থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, আদালত আমাদেরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি তদন্ত চলছে। সঠিক সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন, রায়পুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ইসমাইল খোকন ও রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান উপস্থিত ছিলেন। 

এমএস

Wordbridge School
Link copied!