- ঢাকা
- বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
গাজীপুর: ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। তবে ঈদের এই সময়ে বিনোদন প্রেমীদের জন্য বাড়তি আনন্দ যোগ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে ঘুরে বেড়ানো। এবার তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে, গাজীপুরের নামকরা পার্ক ও রিসোর্ট গুলোতে দুপুর গড়িয়ে পরন্ত বিকেলের ছায়া নেমে আসা মাত্রই বিভিন্ন পেশাজীবীদের পাশাপাশি শিশু, নারীসহ সকল শ্রেণির বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ঢল নেমেছে।
জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতরের ছুটির সময়ে গাজীপুরের বিনোদন পার্কে ব্যাপক দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটবে। এমন সম্ভাবনা উপলব্ধি থেকেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই জেলার সরকারি-বেসরকারি উদ্যানগুলোর পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের চিত্র বিনোদন নির্বিঘ্নে দিতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন রিসোর্স ও পার্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন দর্শনার্থীদের সুন্দর ভাবে চিত্র বিনোদন দিতে
উদ্যানগুলোর ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর ওয়াকওয়ে,ফুলের বাগান,থাকার ঘর,রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি জায়গাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চকচকে ঝকঝকে করে সাঁঝানো হয়েছে।
গাজীপুরবাসীর বিনোদনের চাহিদার কথা বিবেচনা করে জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদার দিঘি গ্রামে সীগাল রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে।এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশী ফলজ,বনজ ও ঔষধি গাছের সমারোহে প্রায় ৪২ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত সীগাল রিসোর্টকে আরো প্রশান্তিময় করে তুলেছে। এই রিসোর্টে আছে কিডস জোন, মিনি চিড়িয়াখানা,কনফারেন্স রুম,রেস্টুরেন্ট,লেক এবং খেলার মাঠ।
এই রিসোর্স রমজানের পুরো এক মাস বিনোদন প্রেমীদের তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি। তাই পার্ক কর্তৃপক্ষ ঈদের দিন বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ঢল নামার সম্ভাবনা থেকেই ঈদের তিন দিন আগে থেকে রিসোর্স পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাঁঝিয়ে রেখেছেন।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে এই রিসোর্স গেটে এক বিনোদন প্রেমীর শরিফুল ইসলাম জানান,তিনি ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আজ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে এখানে এসেছেন। তিনি আরও বলেন,আমি সব ঘোরে দেখলাম ঈদ উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ রিসোর্স পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলেছেন।পরিবারের সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে আনন্দ উপভোগ করছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা বারো তোপা এলাকায় অতন্ত্য সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে কয়েক একর জায়গা নিয়ে গড়ে তুলা হয়েছে একটি ফ্যামেলি পার্ক। পার্কটির নাম দেওয়া হয়েছে ডক্টর গ্রীণ পার্ক। এই পার্কে শুক্রবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। তবে দুই ঈদের সময় বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ঢল নামে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ৩ টার দিকে এই পার্কের গেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, দলে-দলে বিনোদন প্রেমীরা ছুটে আসছে। এখানে জয়দেবপুর থেকে আসা মুনিয়া আক্তার নামে এক দর্শনার্থী জানান,তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার স্বামীও ঢাকায় এক কোম্পানিতে চাকরি করেন। দুই ঈদের সময় ছাড়া এক সঙ্গে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথাও ঘোরাঘুরি করতে সময় পাওয়া যায় না। আজ তাই ফ্যামেলি এই পার্কটিতে ঘোরতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন,এখানে এসে কিছুটা চিত্র বিনোদন পেয়ে বাচ্চাও অনেক আনন্দ উপভোগ করছে।
গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার নুহাশ পল্লীর পরিচ্ছন্নতাকর্মী ফজলু মিয়া বলেন,নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন স্যারের মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকীতে মাঠ-ঘাট-ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। এছাড়া বছরের দুই ঈদের সময় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ের কথা চিন্তা করে পার্কের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। ঈদের পর দিন থেকেই নুহাশ পল্লীতে প্রচুর বিনোদন প্রেমীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন,তাদের এই পল্লীর সুবাদে হোতাপাড়া এলাকায় এক আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। আগামী আরও কয়েক দিন এমন অবস্থা থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।
অপর দিকে দেশের অন্যতম সেরা ও এশিয়ার বিখ্যাত সাফারি পার্ক। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা,এখানেও একই অবস্থা ঈদের দিন থেকেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লাগার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই। পার্ক কর্তৃপক্ষ রমজান মাসের শেষ সাত দিন আগে থেকেই তারা পার্ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা শুরু করেছে।এই পার্কের দিনমজুর নাসির উদ্দিন জানান,ঈদের সময় দর্শনার্থীদের ভাল পরিবেশ উপহার দিতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ জন ওয়ার্কার দলবদ্ধভাবে পার্কের বিভিন্ন জায়গা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। ঈদের আগের দিন বুধবারও সর্বশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী বন সংরক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের দিন বিকেল থেকেই প্রচুর বিনোদন প্রেমীদের সমাগম হবে। এমন চিন্তা থেকেই বিপুলসংখ্যক এই দর্শনার্থীদের সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতেই সিংহ বেষ্টনী, আফ্রিকান সাফারিসহ সব বেষ্টনী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।পার্কের দর্শনার্থীদের নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা প্রদানে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্পট সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে ঘুরে দেখতে পারেন,সে জন্য গাড়ি পার্কিং ও অন্যান্য স্পট সাজানো হয়েছে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন,ঈদের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে পার্কে প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্তবয়স্ক, ছাত্র-ছাত্রী ও বিদেশী সহ ১৩ হাজার ৩১২টি টিকেট বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও প্রায় ২০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। আজ শনিবার দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ঢল নামবে বলে আশা করছেন তিনি।
এমএস
-20240508114817.jpg)
আপনার মতামত লিখুন :