• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
লক্ষ্মীপুরে নোমান-রাকিব হত্যা 

১ বছরেও প্রধান আসামি জিহাদি অধরা, এলাকায় জামিনে মুক্তদের মহড়া!


লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৮:৪৮ পিএম
১ বছরেও প্রধান আসামি জিহাদি অধরা, এলাকায় জামিনে মুক্তদের মহড়া!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যাকাণ্ডের ১ বছর পার হয়েছে। তবে এ ঘটনার মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদি পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখনও অধরা জিহাদি! এ ছাড়া আরেক আসামি মকবুলকে বিভিন্ন সময় এলাকায় দেখা গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অপর ২ আসামি শরীফ ও কালুও পলাতক রয়েছে। তবে এ হত্যা মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা জামিনে রয়েছেন।

নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, জামিনে মুক্ত আসামিরা এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন, এতে আসামিদের হামলার ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা। 

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। 

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া ও মামলার বাদী বশিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুর রহমান জানান, মামলার পর থেকে বিভিন্ন সময় এজাহারভুক্ত ১১ আসামিসহ মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে মামলার তিন নম্বর আসামি দেওয়ান ফয়সালসহ কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন ফয়সাল।  

নিহত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার ১ বছর পার হলেও এখনও প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। স্থানীয়রা কাশেম জিহাদি ও তার বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছে না। কখন আবার কোন মায়ের বুক খালি হয়, তা নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে। দ্রুত এ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি করছি। 

মামলার বাদী বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নিহত নোমানের বড় ভাই মো. মাহফুজুর রহমান সোনালীনিউজকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি কাশেম জিহাদিসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়নি। এখনও তারা পালিয়ে থেকে এলাকায় বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। গ্রেপ্তার আসামিরাও জামিনে বের হয়ে এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে। তাদের কারণে মসজিদে নামাজ পড়তে যেত্রে ভয় হচ্ছে। ভয়-ডর নিয়েই পরিষদে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কাশেম জিহাদীর ভাই লেদা, নিশান, কদু আলমগীরসহ সব আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া আসামি মকবুলকেও বিভিন্ন সময় এলাকায় দেখা যায়। 

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাদের মধ্যে কয়েকজন আইনজীবী আছেন, যারা আসামিদের পক্ষে কাজ করেন। যতদিন দলীয় আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে থাকবে, ততদিন ন্যায়বিচার পাবো কি না সন্দেহ হচ্ছে।

 

লক্ষ্মীপর সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মামলার পর থেকে এজহারভুক্ত ১১ আসামিসহ মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা জামিনে রয়েছে। এর মধ্যে তিন জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। মামলার প্রধান আসামি কাশেম জিহাদিসহ এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। কাশেম জিহাদীর অবস্থানও জানা যাচ্ছে না। কিছুদিন ভয়েস পাঠিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিলেও এখন তা হচ্ছে না। মামলার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। ঘটনার বিষয়ে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। আরও তথ্য জানা যাবে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, এ মামলার শুরু থেকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হবে এমন কোনো তদন্ত এ মামলায় হবে না। আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। বশিকপুরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে আমাদের ক্যাম্পে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। বশিকপুরকে ঘিরে চন্দ্রগঞ্জ থানা এবং আমাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনকে আসামিকে করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনার ২২ দিন পর কাশেম জিহাদিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জিহাদী বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। 

এমএস

Wordbridge School
Link copied!